মো. বদরুল হায়দার ব্যাপারী
প্রাথমিক কথাঃ
আমরা মাছের উচ্ছিষ্টাংশ পঁচিয়ে প্রাকৃতিক হরমোন তৈরি করতে পারি। এটি ঝিনাইদাহ অঞ্চলে কৃষক মহলে জৈব বীট বেড়া নামে পরিচিত। মাছের উচ্ছিষ্টাংশ পঁচিয়ে ফসলে স্প্রে করলে প্রচুর পরিমাণ ফসফরাসসহ অন্যান্য অনুখাদ্য, হরমোনের উপাদান পাওয়া যায়। অন্যদিকে সফল গবাদি প্রাণির আক্রমন মুক্ত থাকে। গবাদি প্রাণির আক্রমণ রক্ষায় বেড়া দেয়ার প্রয়োজন হয় না। তাই এটিকে জৈব বীট বেড়া বলা হয়ে থাকে ।
তৈরী কৌশলঃ
বাসায় মা, বোনেরা মাছ কাটলে যে উচ্ছিষ্টাংশ থেকে যায় (আইস, পেটা, থুতনি, লেজের শেষ অংশ, কাটা ইত্যাদি) তা পরিস্কার কোন খোল বা চটের উপরেই রেখে থাকেন সাধারনত। মাছ কাটার সময় তারা ছাই যতটা কম নিতে পারেন ততই ভাল ।
এই উচ্ছিষ্টাংশ একটা মাটির পাত্রে রাখুন। পাত্র নির্বাচনে পাত্রের মুখ ছোট হওয়ায় কাজের সুবিধার জন্য উত্তম। কাটা মাছ সাধারণত যেভাবে ধৌত করে সেই ভাবেই ধৌত করবেন। শুধু তিন বার ধৌত করা পানি সংগ্রহ করে মাটির পাত্রে রাখা উচ্ছিষ্টাংশে দিয়ে দিন। এখন মাটির পাত্রটির মুখে একটি ঢাকনা দিয়ে পলিথিন মুড়ে এবার টাইট করে দিন। ছায়াযুক্ত, ঠান্ডা, রোদ পড়ে না এমন স্থানে মাটিতে গর্ত করে ৬ ইঞ্চি নিচে রাখুন ২০/২১ দিন ।
ছাদ বাগানি বন্ধুরা সারদিন ছায়া পরে এমন স্থানে, সিড়ির চিলেকোঠায় রাখতে পারেন ।
২০/২১ দিন পরে তুলে পরিষ্কার পাতলা সুতির কাপড়ে বার বার সুন্দর করে ছেঁকে পানিটুকু সংগ্রহ করুন। এমন ভাবে ছেঁকে নিতে হবে যেন স্প্রে মেশিনের নিড্লে ময়লা আটকে না যায়। ব্যাস্ হয়ে গেল প্রাকৃতিক হরমোন। আপনার তৈরী করা এই হরমোনঃ সাদা পানি # ১ঃ৯ পরিমানে অর্থাৎ ১ লিটার হরমোনের সাথে ৯ লিটার পানি মিশিয়ে সকল ফসলে ব্যবহার করতে পারবেন । তৈরী হরমোন পানি সংগ্রহের সময় হ্যান্ড গ্লোবস, মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। কারন সংগ্রহীত এই পানি দুঃগন্ধ যুক্ত হয়ে থাকে। মূলত দুর্গন্ধের কারনে ফসল গবাদী প্রাণির আক্রমণ মুক্ত থাকে।
উপকারিতাঃ
মাছের উচ্ছিষ্টাংশে তৈরী হরমোন ব্যবহার করলে গাছ পর্যাপ্ত পরিমান ফসফরাসসহ প্রয়োজনীয় অনেকগুলো অনুখাদ্য, হরমোন প্রাপ্ত হয় বিধায় ফসলের পাতা ও কান্ড গঠন মজবুত হয়। মাটি ও সূর্যের আলো থেকে খাদ্য গ্রহণ তরান্বিত করতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় ।
ফলে সব্জির পাতা উজ্জ্বল, পুরু ও বড় হয়। খেতে সুস্বাদু হয়। সব্জি ও ফলের স্বগোত্রীয় ঘ্রান পূর্ণ মাত্রায় ফিরে আসে।
ফুল থেকে ফল ধারণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফল ঝরা রোধ করে । ফলের রং উজ্জ্বল, ত্বক মসৃন ও আকারে বড় হয় বিধায় মোট উৎপাদন বেড়ে যায়। বাজার মূল্য বেশি পাওয়া যায় ।
কলি থেকে ফুল ঝরা রোধ করে। ফুলের পাঁপড়ি বাকানো রোধ করে, ফুলের আকার বড় হয় ।
প্রয়োগ ক্ষেত্রঃ
এটি সকল ধরনের ফল, ফসল, উদ্ভিদে ব্যবহার করে ভাল রেজাল্ট পাওয়া যায় ।
প্রয়োগের সময়ঃ
দানাজাতীয় ফসল যেমন ধান, গম, ভূট্টা, ডাল, তেলবীজ ফসল সমূহে বীজ অঙ্কুরোগমেন পরে ৪/৫ পাতা এলে একবার, মধ্য বয়সে ২৫/৩০ দিন পরে একবার, ফুল থেকে ফল বের হওয়ার পরে শেষবার।
সব্জিতে ৪/৫ পাতা বের হলে একবার এবং ৩০ দিন পরে একবার ।
লাউ, কুমরা, সিম, করলা, ফুট, তরমুজ জাতীয় ফল ফসলে প্রথম ৪/৫ পাতায় প্রয়োগের ৩০ দিন পর পর প্রয়োগ।
ফল জাতীয় উদ্ভিদে যেমন আম, জাম, কলা, কাঠাল, লিচু, আনারস, আঙ্গুর, আপেল, কমলা, মাল্টা, ড্রাগন, রাম্ভূটান, লটকন এ সারা বছর ১/২ মাস পর পর স্প্রে।
ফুলে ৪/৫ পাতা বের হওয়ার পরে প্রতি ১/২ মাস পর পর ব্যবহার করলে ভাল বাড়ন্তি হয়।
ক্যাকটাস উদ্ভিদে রোপনের ১০/১৫ দিন পরে শিকড় সক্রিয় হওয়ার পরে প্রথমবার এর পরে প্রতি ১/২ মাস পর পর ।
আপনি চাইলে ছাদ বাগানের টবের মাটিতে মাঝে মাঝে ব্যবহার করতে পারেন ।
উৎপাদন থেকে মাসের মধ্যে ব্যবহার করা উত্তম।
লেখক- চাষা। কেঁচো চাষা।।
সহসভাপতি, বাংলাদেশ ভার্মীকম্পোষ্ট উৎপাদক এ্যাসোসিয়েশন।
Powered by Facebook Comments