চলমান কৃষি

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বেহাত জমি উদ্ধারে ৩ শতাধিক মামলা

সাইফুল মাসুম, স্টাফ রিপোর্টার, আজকের পত্রিকা

রাজধানীর ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের মোড় থেকে ১০০ গজের মতো পশ্চিমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) একটি সিড স্টোর বা বীজ সংরক্ষণাগার ছিল। সেই সিড স্টোরের এখন আর অস্তিত্বই নেই। সেটি এখন কিউট কোম্পানির জায়গা হিসেবে পরিচিত। ১৪ জানুয়ারি সরেজমিনে দেখা যায়, উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা জায়গাটির ফটকে মালিকের নাম লেখা ‘সুরাইয়া ফেরদৌস রওশন আক্তার (কিউট)’। ভেতরে প্রবেশ করতেই বাঁ পাশে চোখে পড়ে একতলা একটি পরিত্যক্ত ভবন। জানা গেল, এ ভবনটিই ছিল সিড স্টোর। এখন সেখানে রাখা হয়েছে রড, সিমেন্ট, প্লাস্টিকের পাইপসহ নির্মাণসামগ্রী। ভবনের সামনে টিনের চালা দিয়ে বানানো হয়েছে গরুর খামার। সেখানে চারটি গরু লালন-পালন করা হয়।

ডিএইর তথ্যমতে, ডেমরা থানার দেইল্লা মৌজায় কিউট কোম্পানির জায়গার মধ্যে ২৫ শতাংশ জমি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। পুরো জায়গাটি এখন ভোগদখল করছেন কিউট কোম্পানির মালিকেরা।

কিউট কোম্পানির কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী খান বীরু বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আগে ৬ শতাংশ দাবি করেছে; কিন্তু তারা রেকর্ড করিয়েছে ২৫ শতাংশ। এখন জায়গার মালিকেরা বিদেশে আছেন, দেশে ফিরলে এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।

ঢাকার তেজগাঁও থানা সার্কেল কৃষি অফিসার আবিদা মানসুরা বলেন, জমিটা ওদের (কিউট) জায়গার মাঝখানে পড়ে গেছে। ওখানে ঢোকার রাস্তা নেই। ফলে তাদের দখল করতে সুবিধা হয়েছে। জায়গার সামনে ডিএইর সাইনবোর্ড ছিল। দখলদারেরা তা সরিয়ে ফেলেছে। জমি নিয়ে হাইকোর্টে একটি মামলা বিচারাধীন।

ডেমরার এই সিড স্টোরের মতো সারা দেশেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিপুল পরিমাণ জমি বেদখলে আছে। ডিএইর নথি অনুসারে, সারা দেশে অধিদপ্তরের ২ হাজার ৮২ একর জমির মধ্যে ২১৭ একর বেদখল হয়ে গেছে। বেহাত হওয়া জমি উদ্ধার করতে ৩২০টির বেশি দেওয়ানি মামলা চলছে। 

ডিএইর মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘বেদখল জমি উদ্ধার করতে আমরা তৎপরতা বাড়িয়েছি। এ বিষয়ে তদারকি করার জন্য কয়েকজন কর্মকর্তাকে অঞ্চল অনুযায়ী দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছি। এ ছাড়া ডিএইর জায়গার দখল ধরে রাখতে সীমানাপ্রাচীর বা কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার একটি প্রকল্প প্রস্তাব কৃষি মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।’ 

জানা গেছে, বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার করতে ডিএই সারা দেশকে ১৪টি অঞ্চলে ভাগ করে চারজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হলেন অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহাম্মদ কায়কোবাদ খান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুক্তা আকতার, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ফাতেমা জান্নাত মাসফি ও সাবরিনা জিসান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুক্তা আকতার জানান, তাঁর দায়িত্বে থাকা ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলে জমি নিয়ে দেড় শতাধিক মামলা রয়েছে। প্রতিনিয়ত আরও মামলা করা হচ্ছে। 

এ প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অনেক জায়গা বেহাত হয়ে গেছে। অনেক জমি নিয়ে দখলদারদের সঙ্গে মামলা চলমান রয়েছে। কিছু জায়গা আমরা উদ্ধারও করতে পেরেছি। তবে এখনো অনেক জায়গা বেহাত রয়েছে। বেদখল জায়গা উদ্ধার করতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

জানা গেছে, অধিদপ্তরের দখলে থাকা অনেক জমিরও মালিকানা নিয়ে জটিলতা আছে। ধানমন্ডির শংকর এলাকায় ৮ শতাংশ জমিতে ডিএইর মেট্রোপলিটন কৃষি অফিস। জমিটি ডিএইর দখলে থাকলেও রেকর্ড হয়েছে স্থানীয় আফসানা সুলতানার নামে। এ নিয়ে যুগ্ম জেলা জজ আদালতে একটি মামলা চলছে। 

ডিএইর মেট্রোপলিটন কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল কবির বলেন, ‘জায়গাটি আমাদের দখলে আছে, তবুও ঝামেলার শেষ নেই। আদালতে যেতে হয়, উকিলের সঙ্গে কথা বলতে হয়। জমির নথিপত্র নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়।’ 

বেহাত জমি উদ্ধার করতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার বলে মনে করেন সাবেক কৃষিসচিব আনোয়ার ফারুক। তিনি বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অনেক জায়গা বেদখল হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলে এসব জায়গা উদ্ধার করা সহজ হয়। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন জমি দখল করে রাখেন। ক্ষমতার পালাবদল হলে দখলদারও পরিবর্তন হন। এ ছাড়া বেহাত জায়গা উদ্ধার করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও তৎপর হতে হবে।

আজকের পত্রিকা’র সৌজন্যে প্রকাশিত।

Avatar

চাষাবাদ ডেস্ক

About Author

You may also like

চলমান কৃষি

ইরির তত্ত্বাবধানে খাগড়াছড়িতে উচ্চ ফলনশীল ধানের বাম্পার ফলন

খাগড়াছড়ি মহালছড়ি উপজেলার পাকিজাছড়ি গ্রামে এবং সদর উপজেলার ভূয়াছড়ির নতুন বাজার গ্রামে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ইরি) তত্ত্বাবধানে কম সময়ে
চলমান কৃষি

সিলেটের বিশ্বনাথে ৩ দিন ব্যাপী কৃষি মেলার উদ্বোধন

সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলা কৃষি অফিসের আয়োজনে ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ‘কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় ৩ দিনব্যাপী (৮-১০ মে) কৃষি