বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকেরা জানতে চান কৃষি ডিপ্লোমা কমপ্লিট করে উচ্চ শিক্ষার কি কি সুযোগ আছে? উত্তরে যা বলি তাতে অনেকে সন্তুষ্ট হতে পারেননা। তখন সান্ত্বনা দিয়ে বলি ডিপ্লোমা কোর্সগুলো মূলত কর্মমুখী শিক্ষা। সরকারি বেসরকারি চাকুরিতে এর যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। তাছাড়া আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করে স্বাবলম্বী হতে এই শিক্ষা যথেষ্ট সহায়ক। সরকারি চাকুরিতে কৃষি ডিপ্লোমাধারীগণের প্রবেশ পদ ১০ম গ্রেডের। কিন্তু এতকিছুর পরও যারা মেধাবী এবং পারিবারিকভাবে স্বচ্ছল তাদের উচ্চশিক্ষার আকাঙ্ক্ষা থাকা স্বাভাবিক।
একসময় কৃষি ডিপ্লোমা উত্তীর্ণদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আইনগত অস্পষ্টতা থাকলেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় পত্র জারি করে সেই অস্পষ্টতা দূর করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ স্বায়ত্তশাসিত হওয়ায় কেবলমাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত অন্য কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি ডিপ্লোমা উত্তীর্ণরা গ্রাজুয়েট কোর্সে ভর্তির আবেদন করতে পারেনা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও মাঝেমাঝে সমস্যা হয়। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি ডিপ্লোমা উত্তীর্ণদের জন্য বিএজিএড নামে একটি স্নাতক কোর্সে ভর্তির সুযোগ থাকলেও বিএজিএড মূলত বিএড ডিগ্রির সমতূল্য একটি ডিগ্রি। তবে বিভিন্ন এনজিও সংস্থায় বিএজিএড ডিগ্রিধারীদেরকে কৃষি গ্রাজুয়েট হিসেবে মূল্যায়ন করে থাকে।
গত কয়েকদিন আমাদের এটিআই থেকে পাস করা কয়েকজন শিক্ষার্থী ফোন করে এসব বিষয়ে জানতে চাচ্ছে। সেজন্য এই লেখাটির অবতারণা। নিচে সংযুক্ত পত্রে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন চার বছর মেয়াদি কৃষি ডিপ্লোমা কারিকুলাম সাধারণ শিক্ষার এইচএসসি (বিজ্ঞান) এর সমমানের চেয়েও দুই বছরের উচ্চতর মানের। অর্থাৎ উচ্চশিক্ষার জন্য এইচএসসি (বিজ্ঞান) উত্তীর্ণরা যেখানে যেখানে ভর্তির যোগ্য কৃষি ডিপ্লোমা উত্তীর্ণরাও সেখানে সেখানে ভর্তির যোগ্য। অথচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের ভর্তি নীতিমালায় এ সংক্রান্ত নির্দেশনা না থাকায় কৃষি ডিপ্লোমা উত্তীর্ণ মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের উচ্চশিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে মেধাবীরা কৃষি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তিতে আগ্রহী হবেনা। এর ফলে প্রান্তিক লেভেলে লাগসই কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ তথা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ব্যহত হতে পারে। সেজন্য কৃষি ডিপ্লোমা কোর্সে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে তাদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ অবারিত রাখা উচিত।
*লেখকঃ মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, উপসহকারী প্রশিক্ষক, এটিআই, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী।
Powered by Facebook Comments