দেশে প্রথমবারের মতো ধানের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স বা জীবনরহস্য ও বিভিন্ন জিন আবিষ্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক লবণাক্ততা ও বন্যাসহিষ্ণু বিনা ধান ২৩-এর ওপর গবেষণা করে এ সাফল্য পেয়েছেন। গতকাল বিনা সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। এ সময় ধানের জীবন রহস্যের উন্মোচন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
বিনা মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলামের নেতৃত্বে বাকৃবির গবেষক পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. বজলুর রহমান মোল্যা ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শহিদুল ইসলাম, বিনার প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামছুন্নাহার বেগম এবং পিএইচডি শিক্ষার্থী মানস কান্তি সাহা গবেষণাটির সাথে জড়িত ছিলেন।
সম্মেলনে ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, সাধারণত বিনা উদ্ভাবিত জাতগুলোতে বিভিন্ন রেডিয়েশন প্রয়োগের মাধ্যমে জাত উন্নয়ন করা হয়। তবে এ রেডিয়েশনের প্রভাবে জিনের কী ধরনের পরিবর্তন হয় তা আগে জানা সম্ভব হতো না। আমাদের এ উদ্ভাবনের ফলে এখন থেকে যেকোনো ধানের জাতের জিনপর্যায়ে কী ধরনের পরিবর্তন হয় তা নিশ্চিতভাবে জানা যাবে।
গবেষণা সম্পর্কে অধ্যাপক ড. বজলুর রহমান মোল্যা বলেন, বিনা উদ্ভাবিত বিনা ধান-২৩ একটি লবণাক্ত ও বন্যাসহিষ্ণু ধানের জাত। ২০১৯ সালে বাকৃবি ও বিনার গবেষকদের প্রচেষ্টায় বিনাধান-২৩ ও তা থেকে উৎপন্ন তিনটি মিউট্যান্ট (রেডিয়েশন দ্বারা প্রভাবিত জাত) ধানের জিনোম সিকোয়েন্স সম্পন্ন করা হয়, যা বাংলাদেশে প্রথম। এ জিনোম সিকোয়েন্স উদ্ভাবনের ফলে দেশে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ওই ধানের জাতে আমরা প্রতিকূল আবহাওয়া সহিষ্ণু ২৩টি জিন, উচ্চফলনশীল বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী ১৬টি জিন এবং চালের আকার-আকৃতির জন্য দায়ী চারটি জিন শনাক্ত করতে পেরেছি। তিনি আরো বলেন, এই গবেষণাকে কাজে লাগিয়ে ধানের জাতের শনাক্তকৃত জিনগুলো পরবর্তীতে দেশী-বিদেশী বিজ্ঞানীরা রেফারেন্স জিনোম হিসেবে ব্যবহার এবং ধানের উচ্চফলনশীল জাতে স্থানান্তর করতে পারবে।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্য চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। দেশে প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর অতিরিক্ত এই মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটানো কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত ফসলের জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমেই কেবল সবার খাদ্য চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।
চাল আমদানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয়, এ তথ্য ভুল : চলতি মাসে চাল আমদানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই তথ্য ভুল বলে দাবি করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ চাল আমদানিতে দ্বিতীয় নয়। গত জুলাই থেকে এ পর্যন্ত (১৮ ডিসেম্বর) মাত্র ১৫ লাখ টন চাল দেশে আমদানি হয়েছে। কিন্তু ২৬ লাখ টন চাল আমদানির আইপিও দেয়া হয়েছে। ফলে চাল আমদানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয়- এ ভুল তথ্য না ছড়ানোর জন্য সাংবাদিকদের আহ্বান জানান মন্ত্রী।
Powered by Facebook Comments