মোঃ কামরুজ্জামান বিদ্যুৎ
বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইন্সটিটিউট কতৃক উদ্ভাবিত ধানের নতুন পাচঁটি জাতের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় কারিগরী কমিটি।
চূড়ান্ত অনুমোদনকৃত জাতগুলি হলো ব্রি ধান-৮২, ব্রি ধান-৮৩,ব্রি ধান-৮৪,ব্রি ধান-৮৫ ও ব্রি ধান-৮৬।
বিজ্ঞানীরা জানান ব্রি ধান-৮২ রোপা আউশ মৌসুমের স্বল্প জীবনকালীন একটি জাত, এর জীবন কাল ১০০-১০৫ দিন যা ব্রি ধান-৪৮ এর চেয়ে ৪-৫ দিন কম। এ জাতটির গড় ফলন হেক্টরে ৪-৫.৫ টন। চালে অ্যামাইলেজের পরিমান ২৮ শতাংশ, চালের আকৃতি মাঝারি মোটা, রং সাদা, ভাত ঝরঝরে এবং প্রতিটি দানায় প্রোটিনের পরিমান ৭.৬ শতাংশ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন ব্রি ধান-৮২ জাতটি দেশের মাঠে মাঠে কৃষকের মুখে হাসি ফোটাবে এবং জাতটি স্বল্পকালীন হওয়ায় রোপা আউশ মৌসুমে দান আবাদের পর আমন আবাদেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ব্রি ধান-৮৩ বোনা আউশ মৌসুমের একটি জাত। এর জীবন কাল ১০০-১০৫ দিন। গড় ফলন ৪-৫.৫ টন যা ব্রি ধান-৪৩ এর চেয়ে ১ টন বেশী। চাল মাঝারি মোটা ও সাদা, ভাত ঝরঝরে, চালে অ্যামাইলেজের পরিমান ২৬ শতাংশ এবং দানায় প্রোটিনের পরিমান ৭ শতাংশ।
ব্রি ধান-৮৪ জিংক সমৃদ্ধ উচ্চ ফলনশীল,স্বল্প জীবনকালীন একটি জাত। চালে জিংকের পরিমান ২৭.৬ শতাংশ যা ব্রি ধান-৭৪ এর চেয়ে ৩.৬ শতাংশ বেশী।এ জাতটির জীবনকাল ১৪০-১৪৫ দিন।গড় ফলন হেক্টরে ৬-৬.৫ টন। চালে অ্যামাইলেজের পরিমান ২৫.৫ শতাংশ। চালের আকৃতি লম্বা চিকন,রং লালচে বাদামি, ভাত ঝরঝরে এবং দানায় প্রোটনের পরিমান ৮.৩ শতাংশ। ব্রি’র বিজ্ঞানীরা মনে করেন জাতটি স্বল্পকালীন হওয়ায় এ ধান আবাদের পর পাট চাষের সুযোগ তৈরী হবে।
ব্রি ধান-৮৫ জাতটি রোপা আউশ মৌসুমের। নতুন এ জাতটির জীবনকাল বন্যামুক্ত পরিবেশে ১০৬-১১০ দিন। গড় ফলন হেক্টরে ৪.৫-৫.৫ টন। চালে অ্যামালেজের পরিমান ২৫.২ শতাংশ। চালের আকৃতি লম্বা চিকন,রং সাদা,ভাত ঝরঝরে,দানায় প্রোটনের পরিমান ৮.১ শতাংশ।
ব্রি ধান-৮৬ বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউটে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্ভাবিত প্রথম জাত। এ জাতটির গড় ফলন ৬-৬.৫ টন তবে উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এর ফলন ৮ টন পর্যন্ত হতে পারে। ব্রি ধান- ৮৬ এর জীবনকাল ১৪০-১৪২ দিন। চালে অ্যামাইলেজর পরিমান ২৫ শতাংশ। চালের আকৃতি লম্বা চিকন,রং সাদা,ভাত ঝরঝরে ও সুস্বাদু। দানায় প্রোটিনের পরিমান ১০ শতাংশ। ব্রি বিজ্ঞানীরা মনে করেন জাতটি ব্রি ধান-২৮ এর পরিপূরক হবে।
ব্রি এর মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহাজাহান কবীর বলেন, উদ্ভাবিত পাচঁটি নতুন জাতের মধ্যে তিনটি আউশ মৌসুমের ও দুইটি বোরো মৌসুমের। আউশকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের সেজন্য আমরা আউশের উপর জোর দিয়েছি।
ড.মোঃ শাহাজাহান কবীর আরো বলেন জাতগুলো জাতীয় কারিগরি কমিটিতে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়ছে।
ব্রির উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.তমাল লতা আদিত্য এ বিষয়ে বলেন দীর্ঘ দিনের পরিশ্রমে ব্রির বিজ্ঞানিরা নতুন পাচঁটি জাতের ধান উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে এবং প্রথম বারের মত একটি জাতে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে ধানের এই নতুন জাতগুলি কৃষকের মুখে হাসি ফুটাবে বলে বিশ্বাস করেন ব্রি বিজ্ঞানীরা।
[তথ্যসূত্র: ব্রি]
Powered by Facebook Comments