ধানের ব্লাস্ট রোগ লক্ষন, করনীয়, প্রতিকার ব্যবস্থা
রাসেল মাহবুবঃ
ধান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দানাশস্য ও অর্থকরী ফসল। বোর আবাদ প্রধান হলেও আমন ও আউশেও ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে। তবে গেল কয়েক মৌসুমের ধান আবাদের কিছু অন্তরায় এর মধ্যে ধানের ব্লাস্ট রোগটি অন্যতম আলোচনার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। গত বোরো মৌসুমে দেশের অধিকাংশ এলাকার আবাদী ধানের জমিতে ব্লাস্টের আক্রমণ দেখা দিয়েছিল।তার ফলোশ্রুতিতে কোথাও কোথাও উৎপাদন শূণ্যের কোঠায় ঠেকেছে। আজ ধানের এই মারান্তক রোগটি নিয়ে আলোচনা করব।
রোগের নাম : ব্লাস্ট রোগ (Blast)।
ধান গাছের ৩টি অংশে রোগটি আক্রমণ করে থাকে। গাছের আক্রান্ত অংশের ওপর ভিত্তি করে এ রোগটি তিনটি নামে পরিচিত। যেমন-
১. পাতা ব্লাস্ট,
২. গিট ব্লাস্ট এবং
৩. নেক/শীষ ব্লাস্ট।
রোগের কারনঃ
পাইরিকুলারিয়াগ্রিসিয়া (Pyricularia grisea) নামক ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে।
এ রোগটি আমন ও বোরো উভয় মৌসুমেই হতে পারে। ধানের চারা অবস্থা থেকে ধান পাকার আগ পর্যন্ত যে কোনো সময় এ রোগটি হতে পারে। চাষী ভাই ও চাষাবাদ এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের জেনে রাখা উচিত এ রোগটি প্রতিকার হতে প্রতিরীধই একমাত্র পন্থা। আক্রমন হয়ে গেলে ক্ষতি যা হবার তা হয়ে যায় ফলে শত প্রতিকার ব্যবস্থায়ও তেমন কাজে আসে না। তাই কি কি কারনে ও অবস্থায় ব্লাস্ট হতে পারে তা জেনে গুরুত্বের সাথে সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থাপনা নিতে হবে।
সাধারনত বীজ, বাতাস, কীটপতঙ্গ ও আবহাওয়ার মাধ্যমে ব্লাস্ট ছড়ায়।অন্যতম উল্লেখ্যযোগ্য আবহাওয়াগত কারন গুলো হল –
★রাতে ঠাণ্ডা, দিনে গরম ও সকালে পাতলা শিশির জমা হওয়া
★হালকা গুড়িগুড়ি বৃষ্টি
★মেঘলা গুমোট ব্যপসা আবহাওয়া
★ ঝড়ো হাওয়ার পর গুড়িগুড়ি বৃষ্টি
আবহাওয়াগত একারন গুলোর বা এর যে কোন একটি কারনেও ব্লাস্ট রোগ দ্রুত ছড়ায়। এমনকি মহামারি আকারে ছড়াতে পারর। তাছাড়া হালকা মাটি বা বেলেমাটি যার পানি ধারণক্ষমতা কম সেখানে রোগ বেশি হতে দেখা যায়। জমিতে মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সার এবং প্রয়োজনের তুলনায় কম পটাশ সার দিলেও এ রোগের আক্রমণ বেশি হয়। দীর্ঘদিন জমি শুকনা অবস্থায় থাকলেও এ রোগের আক্রমণ হতে পারে।
★পাতা ব্লাস্টঃ
রোগের লক্ষণঃ
পাতায় প্রথমে ডিম্বাকৃতির ছোট ছোট ধূসর বা সাদা বর্ণের দাগ দেখা যায়। দাগগুলোর চারদিক গাঢ় বাদামি বর্ণের হয়ে থাকে। পরবর্তীতে এ দাগ ধীরে ধীরে বড় হয়ে চোখের আকৃতি ধারণ করে। অনেক দাগ একত্রে মিশে পুরো পাতাটাই খুব দ্রুততম সময়ে ধূসর হয়ে যায়। ব্লাস্টের ব্যাপকভাবে আক্রমনে জমি পোড়ে যাওয়ার মতো মনে হয়। অনেক ক্ষেত্রে খোল ও পাতার সংযোগস্থলে কাল দাগের সৃষ্টি হয়। যা পরবর্তীতে পচে যায় এবং পাতা ভেঙে পড়ে ফলন বিনষ্ট হয়।।
গিঁট বা নোড ব্লাস্টঃ
ধান গাছের থোড় বের হওয়ার পর থেকে এ রোগ দেখা যায়। গিঁটে কালো রঙের দাগ সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে এ দাগ বেড়ে গিঁট পচে যায়, ফলে ধান গাছ গিঁট বরাবর ভেঙে পড়ে।
নেক বা শীষ ব্লাস্টঃ
এ রোগ হলে শীষের গোড়া অথবা শীষের শাখা প্রশাখার গোড়ায় কাল দাগ হয়ে পচে যায়। শীষ অথবা শীষের শাখা প্রশাখা ভেঙে পড়ে। ধান চিটা হয়।
ব্লাস্টের প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনাঃ
@রাসেল মাহবুব
উপসহকারী কৃষি অফিসার
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
Powered by Facebook Comments