বাংলাদেশে সুদীর্ঘকাল ধরে সবজি ও ভেষজ হিসেবে কচু ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কচুতে প্রচুর পরিমাণ শ্বেতসার, লৌহ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন এ ও সি রয়েছে।
সাধারণত যে কচু স্বল্প পানিতে চাষ করা যায় তাকে পানিকচু বলা হয়। আমাদের দেশে স্থান ভেদে পানিকচুর নাম ভিন্ন। যেমন- নারকেলি কচু, শোলা কচু, জাত কচু, বাঁশকচু, কাঠকচু ইত্যাদি। তবে পানি কচু নামেই সর্বাধিক পরিচিত। পানিকচুর লতি ও কাণ্ড সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্ষার শেষে যখন বাজারে সবজির ঘাটতি দেখা দেয় তখন জুন-সেপ্টেম্বর মাসের বাজারে পানি কচুর লতি ও কাণ্ড বেশ জনপ্রিয়।
পানিকচুর উল্লেখযোগ্য জাত
পানিকচুর উপযুক্ত জমি তৈরি ও চারা রোপন
আগাম ফসলের জন্য কার্তিক ও নাবী ফসলের জন্য মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য বৈশাখ মাসে লাগানো যায়। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য অগ্রহায়ণ-পৌষ মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। হেক্টর প্রতি সাধারণত ৩৭-৩৮ হাজার চারার প্রয়োজন হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সে.মি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪৫ সে.মি.।
পানি কচুর চারা রোপণের আগে এর সমস্ত পাতা, শিকড় ও কাণ্ডে তলার কিছু অংশ কেটে ফেলতে হবে। এতে করে চারা দ্রুত মাটিতে লেগে যায়। জমি কাদাময় না হলে রোপণের পর পরই জল সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। যে সব জায়গা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে সেখানে কার্তিক মাসেই চারা লাগানো ভালো এতে বর্ষার পানিতে তলিয়ে যাবার আগেই ফসল তোলা যায়।
উপযোগি জলবায়ু ও মাটি
কচু উষ্ণ জলবায়ু পছন্দ করে। পলি দোঁআশ ও এঁটেল মাটি পানিকচু চাষের উপযোগী। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে পানি কচু লাগালে বন্যার ভয় থাকে না। তবে জমিতে যাতে সব সময়ই কিছু পানি থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। পানি কচুর গোড়ায় দাঁড়ানো পানির গভীরতা ৮-১০ সে.মি. এর বেশি হলে ফলন কমে যায় এবং দাঁড়ানো পানি মাঝে মাঝে নাড়িয়ে দিতে হয়। বর্ষাকালে পানির পরিমাণ ৮-১০ সে.মি. এর বেশি হলে অতিরিক্ত পানি সরিয়ে ফেলতে হয়।
পানি কচু চাষে সার প্রয়োগ/ব্যবস্থাপনা
পানি কচু চাষে সার প্রয়োগ অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত হয়েছে । বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট অনুমোদিত
সারের মাত্রা হলো –
*এলাকা ভেদে প্রয়োজনানুসারে।
গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট, বরিক এসিড ও অর্ধেক এমওপি সার জমি তৈরির সময় শেষ চাষের আগে প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে অর্ধেক এমওপি ও এক ষষ্টাংশ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিতে হবে। বাকি পাঁচ ভাগ ইউরিয়া সমান কিস্তিতে ১৫ দিন পর পর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
পানিকচু দেশের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু এখনও এটি অবহেলিত সবজি হিসেবে বিবেচিত হয়। এর বাণিজ্যিক চাষাবাদের প্রতি দেশের সব অঞ্চলে সমান আগ্রহ তৈরি হয়নি। অথচ ইতিমধ্যে বাংলাদেশ থেকে হিমায়িত কচুর লতি স্বল্প পরিমানে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা গেলে তা পুষ্টি সমৃদ্ধ জাতি গঠনের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
Powered by Facebook Comments