রাস্তায় চলতে চলতে কিছু মহিলা মানুষ দেখা যায়, বয়স চল্লিশের উপর। আকর্ষণ কম। শরীর ভারস্থ। তাদের সামনে আঠার উনিশের তরুনী হেঁটে যায়। দেখতে সুন্দর। জ্বলজ্বলে। আকর্ষণীয়। সামনের উজ্জ্বল তরুনীটির মা, পেছনের অনুজ্জ্বল মহিলা।
কেন দু’জনের শরীরে, আকর্ষণে, সৌন্দর্যে সুবিশাল ফারাক ?
একদিন পেছনের মহিলাও তরুনী ছিল। উজ্জ্বল ছিল। কোন যুবক তাকেও চিঠি লিখে মুগ্ধতার কথা বলত। কতিপয় যুবকের স্বপ্নভঙ্গ করে তাকেও কেউ একজন বিয়ে করে নিয়ে চলে যায়।
এরপর
কেউ একজনের জন্য সে স্বপ্ন দেখে, ঘর সাজায়, যত্ন করে, চমৎকার যৌনজীবন উপহার দেয়। সময় বাড়ে। একদিন ভালোবাসার চরম উৎকর্ষতায় সে পেটের মধ্যে আরেকজনকে নিয়ে আসে।
এবার শুরু হয় তার নেমে যাবার পালা
নিজের রক্ত খাইয়ে খাইয়ে, পেটের মানুষটাকে বড় করে তোলে। পেটের মানুষটার জন্যে তার ওজন বাড়ে। কোমরে ব্যাথা চলে আসে। খেতে পারে না। ঘুমুতে পারে না। সৌন্দর্য একটু একটু করে খসিয়ে, পেটের জনকে সুন্দর করে গড়ে তোলে।
পেটে, কোমরে তৈরি হয় স্থায়ী দাগ। সবকিছুই হয় পেটের জনের জন্যে, পেটের জনের বাবার জন্যে ।
একদিন ছোট্ট শিশু জন্ম নেয়। এখানেই শেষ নয়। জন্মের নাড়ি কাটার আগে নিজের রক্ত থেকে অ্যান্টিবডি দেয় নিজের সুরক্ষা বলয় ভেঙ্গে। যেন নতুন পৃথিবীতে শিশু সুরক্ষিত থাকে। শিশুর জন্য খাবার তৈরি করে নিজের বুকে। একটু একটু করে শিশু বড় হয়, ভেঙ্গে পড়তে থাকে আগের মানুষ।
শিশুর যত্ন, শিশুর বাবার যত্ন নিতে নিতে অনেকগুলো নির্ঘুম রাত, অনেকগুলো মুহুর্ত কেটে যায় রান্নাঘরে, হাসপাতালে। নিজের সমস্ত সাধ্য দিয়ে সে নতুন জনকে সাজাতে শুরু করে। সুন্দর করে গড়ে তোলে। নিজেকে একটু একটু করে ভেঙ্গে সবকিছু সাজায়। যেভাবে ইটের দালানের ইট খসিয়ে আরেকটি অট্টালিকা তৈরি হয়।
যতটুকু নিজের সৌন্দর্যে, আকর্ষণে সে নামতে থাকে, মানুষ হিসেবে সে ততই উঁচুতে উঠতে থাকে। পৃথিবীর একমাত্র মানুষ, যে নিজের জীবনটা দিয়ে শিশুটির জীবনের আয়ুরেখা টেনেটেনে বড় করে।
পৃথিবীর একমাত্র মানুষ, যে শিশুর মাথার উপর থেকে যেন ছায়া নেমে না যায়, সেজন্য শিশুর বাবারও আয়ুরেখা বাড়াতে থাকে
পৃথিবীর একমাত্র মানুষ যে নিজের মন-শরীর দুটোই বিসর্জন দিয়ে নিঃস্ব হয় হাসিমুখে
♥মা
♥মা
♥মা!
Powered by Facebook Comments