মুক্তমত

বুড়িগঙ্গা নদীর জলে জাল

এ. কে. আজাদ ফাহিম

বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সভ্যতার সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী। একসময় এই নদী ছিলো পূর্ণ যৌবনা আর সম্পদে ভরপুর। বুড়িগঙ্গা নদীর পথ বেয়ে  মূলত গড়ে উঠেছে ঢাকাই সভ্যতা। সভ্যতার ক্রমধারার বৈচিত্র্য রূপান্তরে দখল-দূষনের অত্যাচারে এ নদী এখন মুমূর্ষু প্রায়।

যদিও এখন বুড়িগঙ্গার পুরনো জৌলুস নেই। তবুও বুড়িগঙ্গা নদী তীরের নোংরা আবর্জনা ও দুর্গন্ধময় পরিবেশকে উপেক্ষা করে প্রতিদিন ভীড় করে প্রচুর মানুষ। এখনও  জনবহুল এ শহুরে মানুষের কাছে ময়লা আবর্জনার শেষ আশ্রয়স্থল যেমন নদী, তেমনি ইট-পাথরের যান্ত্রিক জীবনে কিছুটা হলেও প্রশান্তির ঠিকানা এখনও বুড়িগঙ্গা।

আমাদের বাসা বুড়িগঙ্গার কাছে হওয়ায় আমরাও মাঝে মাঝে নদীতীরে হাঁটতে আসি। আশপাশের পরিবেশ খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যের না হলেও নদীর প্রতি টানকে অনুভব করি। বর্ষা শেষে অনেক দিন পরে বুড়িগঙ্গার তীর ধরে হাঁটতে শুরু করি। সামনে গিয়ে দেখি, নদীতে মাছ ধরছেন জেলেরা। এমন দৃশ্য দেখে কিছুটা অবাক হই এই ভেবে এত দূষিত পানিতেও মাছ বাঁচে কি করে?

খেয়াল করে দেখলাম দূষিত পানিতেও প্রচুর মাছের আনাগোনা বুঝা যাচ্ছে।  এরপর দেখার চেষ্টা করলাম বুড়িগঙ্গায় জাল ফেললে কি ধরনের মাছ পাওয়া যায়? একাধারে তিনটি বেল জাল ফেলে মাছ ধরছেন দেখে, আমরা দাঁড়িয়ে গেলাম মাছ ধরা দেখার জন্য। আমাদের মতো অনেকে দাঁড়িয়ে দেখছেন এমন দৃশ্য। জাল তুললে দেখতে পেলাম বেশিরভাগই পুঁটীমাছ, সাথে ভয়াবহ পরিমাণে সাকার মাছও ওঠে আসে। জেলেরা সাকার মাছ গুলো ফেলে দিয়ে অন্য মাছ গুলো তুলে নেন।

দাঁড়িয়ে থাকা অনেকে মাছ কিনতে আগ্রহী। ঢাকা শহরে নদী থেকে তাজা মাছ কিনে নেয়ার আনন্দই আলাদা। জেলেরা মাছ ধরছেন আর সেখানেই মাছ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আমরাও ছোটাছুটি করা ছোটমাছগুলো কেনার সৌভাগ্য বঞ্চিত হতে চাইলাম না। আবার দূষিত পানির মাছ যে অস্বাস্থ্যকর হবে এটা নিয়ে সন্দেহ ছিলো না। তবুও সখ মেটাতে ১০০ টাকায় অল্প কিছু তাজা মাছ কিনে নিলাম। মাছগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। জেলের কাছ থেকে চেয়ে কয়েকটা সাকার মাছও নিয়ে আসলাম। যেহেতু সাকার মাছ একুরিয়াম থেকে ছড়িয়ে পড়েছে নদনদীতে তাই কয়েকটা মাছ আমরা জারে সংরক্ষণ করি। 

যতটা আগ্রহ নিয়ে পুটিমাছগুলো নিয়ে আসলাম, খাওয়ার বেলায় কেউই আগ্রহী হতে পারলাম না। মাছগুলো রাসায়নিক দূর্গগন্ধযুক্ত। অবশেষে রান্না করা মাছগুলো ফেলেই দিতে হলো।

নদ-নদী বাংলাদেশের শিরা-উপশিরার মতো।

বুড়িগঙ্গাসহ আমাদের দেশের সকল নদনদীকে সংরক্ষণের মাধ্যমে দেশের জীববৈচিত্র্যেকে রক্ষা করতে হবে। মনে রাখবেন, দেশকে বাঁচাতে হলে নদীকে বাঁচাতেই হবে।

চাষাবাদ ডেস্ক

About Author

You may also like

মুক্তমত

কৃষিতে নারীর অবদানের প্রকৃত স্বীকৃতি নেই

|| এ. কে. আজাদ ফাহিম || আবহমান কাল থেকে আমাদের এই দেশ কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত। কৃষি একটি মহান
মুক্তমত

কৃষি ডিপ্লোমাধারীরা কেন উচ্চশিক্ষা বঞ্চিত হবেন?

বাংলাদেশে ১৮টি সরকারি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রয়েছে। আর বেসরকারি পর্যায়ে রয়েছে ১৬২টি। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ছয় হাজারের বেশি পাস করে বের