জীবনধারা

ভগবান শ্রী-কৃষ্ণের একটা নাম ‘রাঞ্ছোর’

ভগবান শ্রী-কৃষ্ণের একটা নাম ‘রাঞ্ছোর’। তো এই নামের একটা খুবই ইনসাইটফুল অর্থ আছে। ‘রাঞ্ছোর’ শব্দটাকে ভাঙলে পাওয়া যায় দুটো শব্দ, ‘রণ’ আর ‘ছোড়’। অর্থাৎ যুদ্ধ ছেড়ে দিয়েছেন যিনি।

এই অপমানসূচক নাম ভগবান শ্রী-কৃষ্ণ খুবই সম্মানের সাথে গ্রহণ করেছিলেন।

কৃষ্ণ জন্মতিথিতে সেই গল্প শোনা যাক!

কৃষ্ণ হচ্ছে হিন্দু ট্রিনিটির অন্যতম ভগবান বিষ্ণুর একটা রূপ। কৃষ্ণ তার উইটিনেস, ন্যায় আর প্রজ্ঞার কারণে জনপ্রিয়। মর্তে থাকা কালে তিনি ১০৮ মাতান্তরে ১০০০৮ নামে অবিহিত হতেন। ‘র‌াঞ্ছোর’ এসবের মধ্যে একটি কম আলোচিত, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এক নাম।

মগধ রাজা ছিলেন জরাসন্ধ। জরাসন্ধের জন্ম হয়েছিল দুই মায়ের পেটে অর্ধেক অর্ধেক।

তো ঘটনাচক্রে জরাসন্ধ শ্রীকৃষ্ণের ওপর প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ ছিলেন। কারণ কৃষ্ণ জরাসন্ধের জামাতা অত্যাচারি রাজা কংসকে হত্যা করেছিলেন। কংস আবার কৃষ্ণের মামাও ছিলেন। নিজের মামা কংসকে কৃষ্ণ কেন হত্যা করেছিলেন সেটা আরেক গল্প।

তো সেই আলাপ অন্য কোনদিনের জন্য রেখে জেনে নিন, কংস হত্যার প্রতিশোধ নিতে জরাসন্ধ হয়ে উঠলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। জরাসন্ধ ঠিক করলেন কৃষ্ণের জন্মভূমি মথুরাকে ধ্বংস করে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হবে। বারবার আক্রমণ করে মথুরার প্রতিরক্ষাব্যাবস্থা দুর্বল করে দিতে থাকে জরাসন্ধের সেনাবাহিনী।

১৪ বার মথুরার সীমান্তে আক্রমণ করার পর জরাসন্ধ ডিক্লেয়ার দিলেন এবার তিনি সেনাবাহিনী নিয়ে শহরে প্রবেশ করে কংস হত্যার প্রতিশোধ নেবেন।

জরাসন্ধ সরাসরি মথুরাবাসীকে যুদ্ধে আহবান জানালেন।

আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে যুদ্ধের জবাবে যুদ্ধে না গিয়ে কৃষ্ণ মথুরার রাজা উগ্রসেনকে বললে, রাজ্যের রাজধানী মথুরার কেন্দ্র থেকে অন্যস্থানে সরিয়ে নিতে, যাতে আক্রান্ত হলে মানুষের প্রাণহানি না হয়।

উগ্রসেন বললেন, এভাবে ভীরুর মতো চুপ করে পালিয়ে গেলে মথুরার সম্মানহানি হবে।

কৃষ্ণ বললেন, সম্মানের চাইতে বরং প্রজাদের মৃত্যুযন্ত্রণা থেকে বাঁচানো আমার কাছে বেশি জরুরি দায়িত্ব।

বহুকষ্টে রাজাকে রাজি করিয়ে শ্রীকৃষ্ণ আর্কিটেক্ট বিশ্বকর্মার সহায়তায় মথুরা শহরের আদলে আরেকটা শহর নির্মাণ করেন, যার নাম দ্বারকা। এরপর কৃষ্ণ মথুরা রাজ্যবাসী মানুষদের স্বীয় ক্ষমতাবলে দ্বারকায় স্থানানন্তরিত করেন। মথুরা পড়ে থাকে জনমানবশূন্য এক নগরী হিসেবে।

এদিকে নির্দিষ্ট দিন বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে মথুরায় এসে জরাসন্ধ দেখতে পান শহরটি জনমানবশূন্য।

ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে জরাসন্ধ পুরো শহরটাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিলেন। এবং সেখানেই তিনি ভগবান কৃষ্ণকে ‘রাঞ্ছোর’ নামে ভূষিত করলেন। যুদ্ধ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণেই এই নাম।

এরপর থেকেই মূলত কৃষ্ণের সাথে এই নামটা জুড়ে গেলো। কৃষ্ণও সানন্দে নামটা গ্রহণ করলেন। এই নাম সিম্বোলাইজ করে যুদ্ধের চাইতে শান্তিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে যুদ্ধ ছেড়ে যাওয়া কাপুরুষ উপাধিও সম্মানের হতে পারে।

এই নাম একুশ শতকে এসে আবারো জনপ্রিয় হয় ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমায় আমির খানের নাম হিসেবে। সেখানে তার নাম ছিলো রাঞ্ছোর দাস।

লিখেছেন: আরিফ রহমান

Avatar

চাষাবাদ ডেস্ক

About Author

You may also like

জীবনধারা

সিয়াম সাধনার মাসে সুস্থ থাকতে কিছু করণীয় ও বর্জনীয়

রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থিত পবিত্র মাহে রমজান। এই সময়ে আমাদের নিয়মিত জীবন–যাপনে কিছু পরিবর্তন আসে
জীবনধারা

ইসলামের দৃষ্টিতে কৃষি ভাবনা – শাহ পারভেজ

পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম আ: থেকে শুরু হয়ে পৃথিবীতে আজ মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮০০ কোটির বেশি। প্রাণীর সংখ্যা অগণিত।এই