চাষিবন্ধু সমবেশ

শত বৈষম্যের স্বীকার ডিপ্লোমা কৃষিবিদ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের খোলা চিঠি

শত বৈষম্যের স্বীকার ডিপ্লোমা কৃষিবিদ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের লেখা একটি খোলা চিঠি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি দিয়েছেন বৈষম্যের স্বীকার ডিপ্লোমা কৃষিবিদ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। সোমবার (২৬ আগস্ট) তারা অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে এ খোলা চিঠি দেন। নিচে খোলা চিঠিটি চাষাবাদ ডটকম এর পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মোঃ ইউনুস, সম্মানিত উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্যগন এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রিয় নাহিদ এবং আসিফ। দ্বিতীয় স্বাধীন বাংলাদেশের হাল ধরার জন্য আপনাদেরকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা।

প্রথমেই যারা এই বাংলাদেশকে শোষণ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। তাদের এই আত্মত্যাগ বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বিগত দিনগুলোতে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ বিভিন্ন ভাবে, বিশেষ একটি গোষ্ঠী দ্বারা শোষণ এবং বঞ্চনার শিকার হয়েছেন।ঠিক তেমনিভাবে আমরা ডিপ্লোমা কৃষিবিদ/উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগন শত বৈষম্যের শিকার হয়েছি।

আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমরা ডিপ্লোমা কৃষিবিদগন দেশের খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকি।দেশের কৃষি এবং কৃষকের উন্নয়নে একেবারে তৃনমুল পর্যায়ে কৃষকের বন্ধু হিসেবে কাজ করে থাকি।

সারা বাংলাদেশে প্রতিটি ইউনিয়নে তিনজন করে ডিপ্লোমা কৃষিবিদ / উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছে।যারা কৃষকের সকল সমস্যার সমাধানে কাজ করে থাকেন।কৃষি মন্ত্রণালয়ের সকল প্রকল্প বাস্তবায়নে এই উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের ভুমিকা অপরিসীম। মাঠ পর্যায়ে কৃষির উন্নয়নে সরকারের সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এই উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগনই অগ্রণী ভুমিকা পালন করে।

অথচ এই ডিপ্লোমা কৃষিবিদ /উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বৈষম্যের অন্ত নেই।উর্ধতন কর্মকর্তাগন আমাদের কাজে লাগিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যায়।মাঠে কাজ করে ডিপ্লোমা কৃষিবিদ / উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগন অথচ বাহবা নেয় উর্ধতন কর্মকর্তাগন। কিন্তু এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে মুখ খুলার সাহস পর্যন্ত করতে পারিনাই।সবচেয়ে কষ্ট লাগার বিষয় হলো আমাদের কোন পদোন্নতি নেই, একজন পিওনের ও পদোন্নতি আছে অথচ আমাদের জন্ম যেখানে মৃত্যু সেখানে। অন্যায় ভাবে দীর্ঘদিন যাবত আমাদের পদোন্নতি আটকে রাখা হয়েছে। এরকম শত শত ন্যায়সংগত সুযোগ সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত।

আপনাদের প্রতিশ্রুতি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, আর ন্যায়ের পক্ষে মুক্ত ভাবে কথা বলার স্বাধীনতা। তাই আজ আপনাদের প্রতিশ্রুতিতে সাহসী হয়ে আমাদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে মন খুলে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

আমরা ডিপ্লোমা কৃষিবিদ/ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগন আর বৈষম্যের মধ্যে থাকতে চাই না।তাই বৈষম্য নিরসনে আমাদের কিছু দাবি আপনাদের পদক্ষেপের জন্য উপস্থাপন করছি।

১। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দের গেজেটেড কর্মকর্তা ২য় শ্রেণি হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

২। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ৯ম গ্রেডে ৪০% পদোন্নতি প্রদান করতে হবে।

৩। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দের তৃতীয় গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতির ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪। চাকুরীবিধি অনুযায়ী উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দের নিজ জেলায় বাহিরে বদলির অন্যায় এবং অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।

৫। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে প্রশাসন ক্যাডার নিয়োগ প্রদান করতে হবে।

৬। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সকল প্রকল্পে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দের প্রতিনিধি রাখতে হবে।

৭। প্রকল্প তৈরীর সময় এসএএওদের প্রতিনিধি এবং প্রতিটি বিভাগীয় মিটিংয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দের সদস্য রাখতে হবে।

৮। সকল কৃষি অফিসের প্রকল্পের ব্যায় সংক্রান্ত স্বচ্ছতার জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক থাকতে হবে।

৯। খামারবাড়ি, এডি অফিস, ডিডি অফিসে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দের পদ সৃষ্টি করতে হবে।

১০। যত দ্রুত সম্ভব, নিয়োগ বিধিমালা পরিবর্তন এবং গ্রেডেশন তালিকা হালনাগাদ করতে হবে

১১। ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ প্রদান করতে হবে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের জন্য ভর্তির সুযোগ দিতে হবে। ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের জন্য স্বতন্ত্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।

১২। ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক মানে উন্নিত করতে হবে।
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত করা এবং আলাদা শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।

১৩। প্রতিটি ইউনিয়নে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দের স্বতন্ত্র অফিস সহ বাসভবনের ব্যাবস্থা করতে হবে

১৪। নির্ধারিত ভ্রমণ বিল ৫০০০ টাকা প্রদান করতে হবে।

১৫। টাইমস্কেল ও সিলেকশন/উচ্চতর গ্রেড বহাল করতে হবে চাকুরীকাল গননা করে,আগের মত ৮,১২, ১৬ বছরে করতে হবে।

১৬। ৩/৪ বছরের জটিলতা নিরসন করতে হবে।

১৭। ব্লকের কাজ তরান্বিত করতে সরকারিভাবে মোটরসাইকেল ও স্মার্টফোন+মাসিক ডাটার ব্যবস্থা করতে হবে

১৮। সর্বস্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

১৯। হয়রানি/প্রতিহিংসামূলক বদলি বন্ধ করতে হবে।

২০। নিয়োগ পাওয়ার পর ৬ মাসের বাধ্যতামূলক ট্রেনিংয়ের ব্যাবস্থা করতে হবে।

সম্মানিত বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখানো মহারথীগন, আমাদের বৈষম্য গুলো আজ পাহাড়সম। উক্ত বৈষম্য গুলো থেকে আমরা পরিত্রাণ পাবো বলে স্বপ্ন বুনি এবং মনে প্রাণে বিশ্বাস করি।আপনাদের নজরে আসলে নিশ্চয়ই পদক্ষেপ নিবেন এমনটাই প্রত্যাশা করি।

বৈষম্যহীন বাংলাদেশের অপেক্ষায় রইলাম আমরা কৃষির সৈনিক, কৃষকের বন্ধু।

Avatar

চাষাবাদ ডেস্ক

About Author

You may also like

চাষিবন্ধু সমবেশ

সিলেটে ডিপ্লোমা কৃষিবিদ নেতৃবৃন্দের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ

বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা কৃষিবিদ পরিষদ সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে ১৫ আগস্ট ২০২৩, মঙ্গলবার সকালে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য
চাষিবন্ধু সমবেশ

ক্রপ প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশন শ্রীমঙ্গল চ্যাপ্টারের সভাপতি মোস্তফা, সম্পাদক তাপস

বাংলাদেশ ক্রপ প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২২ মার্চ ২০২৪) সন্ধ্যায় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় এই