বাংলাদেশের হাওর এলাকায় বোরো মওসুমে সঠিক ধানের জাত সঠিক সময়ে চাষাবাদ করতে না পারলে একদিকে ঠাণ্ডার কারণে ধান চিটা এবং অন্যদিকে পাহাড়ি ঢলে বা আকস্মিক বন্যায় আধাপাকা ধান তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় হাওর এলাকায় বৈশাখের তৃতীয় সপ্তাহে (এপ্রিলের শেষ বা মে মাসের শুরু) পাহাড়ি ঢলে বন্যা আসে। বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে (১৪ থেকে ২০ এপ্রিল) ধান পাকলে একদিকে যেমন চিটা হবে না, অন্যদিকে ধান তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও কম থাকে।
জাত নির্বাচনঃ
জমির অবস্থান, উর্বরতা ও পাহাড়ি ঢল আসার সময় বিবেচনা করে ধানের জাত নির্বাচন করতে হবে। হাওর অঞ্চলে চাষাবাদ উপযোগি জাত গুলোর অন্যতম হচ্ছে- ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান৪৫, ব্রি ধান৭৪, ব্রি ধান৮১, ব্রি ধান৮৪, ব্রি ধান৮৮, ব্রি হাইব্রিড ধান৩, ব্রি হাইব্রিড ধান৫ সহ বিভিন্ন হাইব্রিড ধান।
বীজতলা তৈরীঃ
জমি অনুর্বর ও স্বল্প উর্বর হলে পর্যাপ্ত জৈব সার সুষমভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। ২-৩ ইঞ্চি পানি রেখে ২-৩ টি চাষ ও মই দিয়ে ৭-১০ দিন পানি আটকিয়ে রেখে দিতে হবে। আগাছা, খড় ইত্যাদি পঁচে গেলে আবারও চাষ ও মই দিয়ে থকথকে কাদাময় করে জমি তৈরী করতে হবে।
এবার জমির দৈর্ঘ্য বরাবর এক মিটার চওড়া বেড তৈরি করতে হবে। দুই বেডের মাঝে ১২ ইঞ্চি ফাঁকা রাখতে হবে। উক্ত ফাঁকা জায়গার মাটি দু’পাশের বেডে তুলে দিয়ে ৪ ইঞ্চি গভীর নালা তৈরী করতে হবে। এনালা পানি সেচ ও চলাচলের কাজে ব্যবহৃত হবে।
বীজ শোধন, জাগ দেওয়া এবং বীজতলায় বীজ ফেলাঃ
বীজ অল্পসময় রোদে শুকিয়ে ছায়ায় ঠান্ডা করতে হবে।
প্রতি কেজি ধান বীজের জন্য ৩.০ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম গ্রæপের ছত্রাকনাশক ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে শোধন করতে হবে।
বোরো মওসুমে ৬০-৭২ ঘন্টা/ ৩ দিন জাগ দিলে অঙ্কুর বের হবে।
অঙ্কুর ধানের সমান লম্বা হলে বীজতলায় বপনের উপযোগি হবে।
প্রতি বর্গ মিটার বীজতলায় ৮০ গ্রাম বা শতাংশে ৩ কেজি বীজ বপন করতে হবে।
এক শতাংশ বীজতলার চারা দিয়ে ২০-২৫ শতাংশ জমি রোপণ করা যাবে।
বীজ বপণের সময়ঃ
যেসব জাতের জীবনকাল ১৫০ দিন বা তার চেয়ে কম ব্রি ধান২৮, বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড ধান ইত্যাদি জাতের বীজ অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে (১৫-২১ নভেম্বর) বীজতলায় বপন করতে হবে।
যেসব জাতের জীবনকাল ১৫০ দিনের বেশি যেমন- ব্রিধান২৯, ৮৯, ৯২ ইত্যাদি জাতের বীজ ১৭-২৩ কার্তিক (নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে) বীজতলায় বপন করতে হবে।
চারা রোপণঃ
সার ব্যবস্থানাঃ
বোরো মওসুমে ভালো ফলনের জন্য প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমির জন্য বিভিন্ন সারের মাত্রা নিম্নরূপঃ
টিএসপি/ডিএপিঃ ১০ কেজি, এমওপিঃ ২২ কেজি, জিপসামঃ ৮ কেজি, জিংক/ দস্তাঃ ১.৫ কেজি।
ডিএপি সার প্রয়োগ করলে বিঘাপ্রতি ৫ কেজি ইউরিয়া কম দিতে হবে।
ইউরিয়া সম্পূর্ণ সার ও ৫ কেজি পটাশ ব্যতিত অন্যান্য সার সম্পূর্ণ পরিমাণ জমি তৈরীর সময় শেষ চাষের পূর্বে প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
চারা রোপণের ২০ দিন পর, ৪০ দিন পর ও কাইচ থোড় আসার ৫/৭ দিন আগে ইউরিয়া সার সমান তিন ভাগ করে ৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
বাকি ৫ কেজি পটাশ সার ইউরিয়া সারের ৩য় কিস্তির সাথে ছিটিয়ে দিতে হবে।
জমি শুকনো বা বেশী পানি থাকলে অথবা ধানগাছের পাতায় পানি জমে থাকলে ইউরিয়া প্রয়োগ করা ঠিক নয়।
সার উপরি প্রয়োগ করে নিড়ানি যন্ত্র বা উইডার দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করলে ইউরিয়া সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
পানি ব্যবস্থাপনাঃ
ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগের পর ৫-৭ দিন পর্যন্ত জমিতে ১-২ ইঞ্চি পানি থাকা দরকার। তবে কাইচ থোড় আসার পর থেকে দানা গঠন পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই পানি রাখা প্রয়োজন।
আগাছা, পোকা ও রোগ ব্যবস্থাপনাঃ
ফসল কর্তনঃ
Powered by Facebook Comments