এই মাছের নাম টাকি। ইংরেজি নাম Spotted snakehead. বাংলাদেশের স্থানীয় মাছগুলোর মধ্যে একটি জনপ্রিয় মাছ।
স্বাদু পানির এ মাছের ভর্তা খাননি এমন মানুষ এই দেশে পাওয়া বিরল।
টাকি মাছ প্রাক বর্ষা বা বর্ষা মৌসুমে লতাপাতা ঘেরা যায়গায় ডিম পারে। তারপর পুরুষ টাকি মাছের দ্বারা ডিমগুলো নিষিক্ত হয়ে বাচ্ছা ফুটে।
আলোক রশ্মির সাথে লাল হলুদ দাগের পোনাগুলো ঝিলিক দিয়ে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ায় মা ও বাবা টাকি মাছের সাথে। ঝাঁকবেধে চলা পোনাগুলোর কিছুটা দূরে থেকে পাহারা দেয় মা ও বাবা টাকি।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, ঠিক যখন পোনাগুলো ৫/১৫ দিনের হয় তখন একদল উৎসুক কিন্তু নিষ্টুর মানুষের খাদ্যের তালিকায় চলে যেতে হয় পোনাগুলোকে। এই মানুষগুলোর একদল হাটু সমান পানিতে এদের খুঁজে খুঁজে বের করে জাল দিয়ে ধরে। তারপর নিজে খায় বা বাজারে বিক্রি করে।
এই সময়টাতে বাজারে লক্ষ করলে দেখা যায় কিছু মানুষ ভাত তরকারির পাতিলে করে জীবন্ত পোনা নিয়ে বাজারে ঘুরে ঘুরে পোনাগুলো বিক্রি করে।
আমি খুব অবাক হই এত ছোট পোনা মাছ খাওয়ার রুচি কি করে হয়। আর কোন মাছের এত ছোট পোনায় কারো আগ্রহ নেই, আগ্রহ নেই অন্য কোন প্রাণীর ৫/১০ দিনের বাচ্চার প্রতিও।
বাংলাদেশে বিশেষ করে সিলেট ও চট্রগ্রাম অঞ্চলে টাকি মাছের পোনা খাওয়ার প্রবণতা বেশি। তাই এই অঞ্চল গুলোতে সচেতনতা বৃদ্ধি সহ সরকারি আইন বাস্তবায়ন করা উচিত।
বাংলাদেশ মৎস্য আইনে টাকি-শোল মাছের পোনা ধরলে জেল জরিমানার বিধান রয়েছে।প্রতি বছর ১ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট ( চৈত্র মাসের মাঝামাঝি হতে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি) পর্যন্ত শোল, গজার, টাকি মাছের পোনা ঝাঁক বা দম্পতি মাছ ধরা ও ধ্বংস করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না। কেউ এ আইন অমান্য করলে অর্থদণ্ড ও জেল কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
মৎস্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষা আইন ১৯৫০ এর ক্ষমতা বলে প্রনীত Protection and Conservation of Fish Rules,1985 এর বিধি-৭ এ এসব তথ্য রয়েছে।
এটা এভাবে হতে পারে যার হাতেই পোনা পাওয়া যাবে সেই অপরাধী। তাহলে খুব সহজে কেউ এগুলো ধরতে,বিক্রি করতে বা কিনতে আগ্রহী হবে না।
পৃথিবীর নানা দেশে টাকি মাছ পাওয়া গেলেও এ উপমহাদেশেই এর উৎপত্তি। গবেষকদের ধারণা, ভারতীয় উপমহাদেশের দক্ষিণ হিমালয় অঞ্চলে (বর্তমান ভারতের উত্তরাঞ্চল ও পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল) অন্তত ৫ কোটি বছর আগে টাকি মাছের উৎপত্তি হয়েছে।
আইইউসিএন বাংলাদেশ (২০০০) লাল তালিকা অনুযায়ী এই প্রজাতি হুমকির সম্মুখীন নয়
তবুও নির্বিচারে পোনা ধ্বংস করলে এই সময় এই মাছও বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
আমি মনে করি পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা ছাড়া বা পারিবারিকভাবে পোনা না খাওয়ার প্রবণতা তৈরি করা ছাড়া টাকির পোনা রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই বিভিন্ন ফোরাম, সভা, সেমিনার, মসজিদ, মন্দির, টিভি, পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে।
মানুষকে বুঝাতে হবে পোনা খাওয়ার উপযোগী নয়। বুঝাতে হবে টাকি মাছের পোনা, না খেলেই সোনা।
আসুন টাকি মাছে পোনা না খাই, সচেতন নাগরিকের ভূমিকা দেখাই।
লেখক: উপ সহকারী কৃষি অফিসার
ছাতক, সুনামগঞ্জ।