জীবনধারা

ইসলামের দৃষ্টিতে কৃষি ভাবনা – শাহ পারভেজ

পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম আ: থেকে শুরু হয়ে পৃথিবীতে আজ মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮০০ কোটির বেশি। প্রাণীর সংখ্যা অগণিত।
এই বিপুল পরিমাণ মানুষ ও প্রাণি বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন খাবার খাচ্ছে। এই খাদ্যের পুর জোগান আসছে কৃষি থেকে।

আজকের লেখায় আমরা আলোচনা করবো ইসলামের দৃষ্টিতে কৃষি ভাবনা সম্পর্কে।

মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা যে বীজ বপন কর, সে সম্পর্কে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি তাকে অঙ্কুরিত কর, না আমিই অঙ্কুরিত করি? আমি ইচ্ছা করলে তাকে খড়-কুটা করে দিতে পারি।’’ (ওয়াক্বিয়াহ্ : ৬৩-৬৫)

একজন মুমিন হিসেবে এটা মান্য যে আল্লাহ তায়ালা আমাদের রিজিক দান করেন। আর উপরের উল্ল্যেখিত আয়াতটি স্পষ্ট তা প্রমাণ করে।আল্লাহ তায়ালা বলেন, ” তিনি পশুকুল সৃষ্টি করেছেন।এগুলোতে রয়েছে তোমাদের জন্য শীত নিবারক উপকরণ ও উপকার এবং তা থেকে তোমরা আহার্য পেয়ে থাকো। সুরা আন নাহল,আয়াত ৫। আবার বলেন ” তিনি জলরাশিতে অধীন করে দিয়েছেন যাতে তা থেকে তোমরা তাজা মাছ আহার করতে পারো। সুরা আন নাহল,আয়াত ১৪”।

অন্যদিকে মহান আল্লাহ তায়ালার ঐশী কুদরতের দ্বারা আমরা মাটি থেকে ফসল ফলাই। কোরআন মজিদে বলা আছে, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ করুক। আমি তো অঝর ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করেছি। অতঃপর মাটিকে বিদীর্ণ করেছি। আর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্যাদি, আঙুর, শাকসবজি, জলপাই, খেজুর, বহু বৃক্ষ বিশিষ্ট বাগান, ফল-ফলাদি ও ঘাস। এসব তোমাদের ও তোমাদের পালিত পশুকুলের জীবনধারণের জন্য’ (সূরা আবাছা : আয়াত ২৪-৩২)। কোরআন মজিদে আরও বলা আছে- ‘বলতো কে সৃষ্টি করেছেন নভোম-ল ও ভূম-ল এবং আকাশ থেকে তোমাদের জন্য বর্ষণ করেছেন পানি, অত:পর তা দ্বারা আমি মনোরম বাগান সৃষ্টি করেছি’ (সূরা-নহল : আয়াত-৬০)। 

এ থেকে বুঝা গেলো আল্লাহ তায়ালা আমার রিজিক দেন আর উছিলা বা মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন কৃষিকে। অর্থাৎ কৃষিতে মনোনিবেশের মাধ্যমেই যে কেউ পেতে পারেন বেহিসাবি রিজিক।

এবার দেখা যাক বিশ্ব মানবতার দূত হযরত মোহাম্মদ (স) কি বলেন।

রাসুল (সা.) বৃক্ষরোপণকে সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ, পাখি বা পশু যখন তাদের আহার্য গ্রহণ করে, তখন তা তার (রোপণকারী) পক্ষে একটি সদকা (দান) হিসেবে পরিগণিত হয়’ (মুসলিম, ২৯০০)

২৩২০. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কোন মুসলিম ফলবান গাছ রোপণ করে কিংবা কোন ফসল ফলায় আর তা হতে পাখী কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু খায় তবে তা তার পক্ষ হতে সাদাকা্ বলে গণ্য হবে।

এ থেকে প্রতিয়মান হয় কৃষি কাজ বা গাছ লাগানো জীবিকার একটা স্বাভাবিক মাধ্যম। এবং কৃষি থেকে উৎপাদিত ফসল বা পন্য মানুষ বা প্রাণী ব্যবহার করলে তা সাদকা হিসেবে কৃষকের আমল নামায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

কৃষি কাজ করাটা অন্তত জরুরি তা আমরা রাসূল (স:) আরেকটি হাদিস থেকে।
 ‘যে ব্যক্তি কোনো পতিত ভূমি আবাদ করবে, সে সেই জমির মালিক হবে।  এ ঘোষণার প্রতিধ্বনি আরেকটি হাদিস আছে, ‘যে ব্যক্তি এমন অনাবাদি জমি আবাদ করে যা অন্যের নয়, সে ওই জমির মালিকানার ব্যাপারে অর্ধেক দাবিদার’ (বোখারী শরীফ)। হজরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত রাসূল পাক (সা.) বলেন, ‘যার জমি আছে সে যেন নিজেই তা চাষ করে। যদি নিজে চাষ না করতে পারে তবে (পতিত না রেখে) কোনো প্রতিদান ছাড়াই যেন অপর ভাইকে তা দান করে’ (মুসলিম)।

এ থেকে স্পষ্ট যে কোন জমিকে কার্যত পতিত রাখা যাবেনা।তাকে সর্বদাই উৎপাদনমূখী রাখতে হবে।
এছাড়ায় রাসুল (স:) বলেন তোমরা ভেড়া পালন করো।কারন এরা সকাল সন্ধ্যায় তোমাদের জন্য সু সংবাদ বয়ে আনবে।
তাছাড়া সকল নবী রাসুলগন মেষ ছড়িয়েছেন।
সুতরাং কৃষিতে লজ্জা নেই আছে গৌরব ও পূন্য অর্জনের বিরাট সুযোগ।

ইসলামে কৃষককে মর্যাদার চোখে দেখা হয়েছে। পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদম আলাইহিস সালামও কৃষিকাজ করতেন। পরবর্তীতে আরো অনেক নবী-রাসূলগণ কৃষি কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের ব্যাপারে বলতে গিয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি তোমাদের ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলবো। আর তিনি চাষবাস করতেন।’ এ পেশাটি আল্লাহর নবীদের অধিকাংশই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাই, ইসলামে এর মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম।

তাই হীনমন্যতায় না ভুগে কৃষিতে মনোনিবেশ করুন।এটা একদিকে যেমন আল্লাহর নির্দেশ অন্যদিকে রাসুল (স:) এর সুন্নাহ ও। তাই একথা বলাই যায় “কৃষিতেই আভিজাত্য “

চাষাবাদ ডেস্ক

About Author

You may also like

জীবনধারা

সিয়াম সাধনার মাসে সুস্থ থাকতে কিছু করণীয় ও বর্জনীয়

রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থিত পবিত্র মাহে রমজান। এই সময়ে আমাদের নিয়মিত জীবন–যাপনে কিছু পরিবর্তন আসে
জীবনধারা

বিপ্লবী কালেমা – নঈম সিদ্দিকী

এ কথা ভাববার কোনই অবকাশ নেই যে, বিশ্বনবী সা. কোন আকীদা- বিশ্বাস, মতাদর্শ, বা পরিকল্পনা ছাড়াই সংস্কার ও বিনির্মাণের কাজ