গাভীর ড্রাই পিরিয়ড বা শুষ্ককাল সম্পর্কে জেনে নিন
![](https://chashabad.com/wp-content/uploads/2024/02/Picsart_24-02-23_00-18-45-397-1296x700.jpg)
ড্রাই পিরিয়ড কী?
একটি গাভীর প্রজনন চক্রের যে সময়টিতে দুধ উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় সে সময়টিকে গরুর ড্রাই পিরিওড বা দুগ্ধহীন সময় বা শুষ্ককাল বলা হয়। সর্বোচ্চ দুধ উৎপাদন, ম্যাসটাইটিস ও মেটাবোলিক রোগ নিয়ন্ত্রনে গাভীর ড্রাই পিরিওড ম্যানেজমেন্ট অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
গাভীর ড্রাই পিরিয়ড বা দুধবিহীন সময়টি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
গাভী গরুর এই দুধবিহীন সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়, কেননা এই সময়ে গাভী নিজেকে পরবর্তী ল্যাকটেশনের জন্য তৈরি করে। এসময় গাভী দুধ উৎপাদন বন্ধ করে পরবর্তী প্রজনন সম্পন্ন করার জন্য সকল দরকারি ঘাটতি পুরণ করে। এতে-
১) গাভীর ওজন বৃদ্ধি পায়;
২) শরীরের দরকারি পুষ্টি ঘাটতি পূরণ হয়;
৩) নবজাতক বাচ্চার সঠিক ওজন ও বৃদ্ধি নিশ্চিত হয়;
৪) গাভীর ওলান বিশ্রাম পায়;
৫) ওলানের টিস্যুগুলো নতুভাবে গঠিত হওয়ার সুযোগ পায়;
৬) গাভীর দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
গাভীকে ড্রাই পিরিয়ড বা দুধবিহীন সময় না দিলে কী হয়?
১) ম্যাসটাইটিসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়;
২) পরবর্তী প্রজননচক্রে হিটে আসতে দেরি হয়, অর্থাৎ ৬০-৭৫ দিনের বেশী হয়ে যায়;
৩) গাভীর দুধ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যায়;
৪) গাভীর বাচ্চা ধারণ কঠিন হয়ে পড়ে;
৫) বিভিন্ন মেটাবলিক রোগ যেমন দুগ্ধজ্বর, কিটোসিস, গ্রাস টিটানি বা ডাউনার্স কাউ সিনড্রোম দেখা দেয়।
গাভীর ড্রাই পিরিয়ড কত দিনের হয়?
সাধারণত এই সময়টি পুনরায় বাছুর প্রসবের ৪৫-৬০ দিন পূর্ব থেকে বাছুর প্রসব পর্যন্ত হয়। অর্থাৎ গাভীর সম্ভাব্য বাচ্চা প্রদানের দিন থেকে ৪৫-৬০ দিন আগের সময়টাই গাভীর ড্রাই পিরিওড।
আমাদের দেশি গাভীর ক্ষেত্রে দেখা যায় সাধারণত ২-৩ মাস আগে দুধ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু অধিক উৎপাদনশীল গাভীগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায় ১ মাস অথবা ১৫ দিন আগে দুধ বন্ধ হয় যা গাভী ও নবজাতক বাছুরের জন্য পর্যাপ্ত নয়। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় দুধ বন্ধই হয় না। বাচ্চা প্রদানের আগের দিনেও ৫-৭ লিটার দুধ প্রদান করে। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ড্রাই কাউ থেরাপি দিতে হবে। যেমন, টিট সিলেন্ট।
গবেষণায় দেখা গেছে গাভীর ড্রাই পিরিওড ম্যানেজমেন্ট সঠিকভাবে সম্পন্ন না হলে গাভীর শরীর, দুধ উৎপাদন ও প্রজনন ক্ষমতার অবনতি ঘটে।
ড্রাই পিরিয়ডের সময় পরবর্তী দুগ্ধকালে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ
৪৫- ৬০ দিন ৯৫০-১০০০ লিটার বাড়ে
৩৫-৪০ দিন ২৫০-৩০০ লিটার বাড়ে
২৫-৩৫ দিন ১০০-২৫০ লিটার বাড়ে
২০ দিনের কম ৩০০ লিটার কমে
৯০ দিনের বেশী ২৫০ লিটার কমে
অধিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী শংকর জাতের গরুর জন্য এই হিসাব প্রযোজ্য। নির্দিষ্ট গরুর উৎপাদন ভেদে এই পরিমাণ কম বা বেশি হবে।
তাই উপরের তালিকা থেকে দেখা যায়, ৪৫-৬০ দিনই গাভীর ড্রাই পিরিয়ড রাখতে হবে। এর কম রাখলেও সর্বোচ্চ পরিমাণ দুধ উৎপাদন সম্ভব হবে না। আর এই সময়ের বেশি ড্রাই পিরিওড রাখলেও দুধ উৎপাদন কমে যাবে।
গাভীর ড্রাই পিরিয়ডের সময় কি গাভীর আলাদা যত্ন নিতে হবে?
অনেকেই মনে করেন, গাভী যেহেতু দুধ দিচ্ছে না তাই এর আবার আলাদা যত্নের কী দরকার। কিন্তু এটাই সবচেয়ে বড় ভুল আমাদের খামারীদের। কারণ এই সময়ের যত্নের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে গাভীর দুধ উৎপাদন বাড়ে ও সুস্থ বাচ্চার জন্ম হয়। গাভীর ড্রাই পিরিয়ডের প্রথম ৪০ দিন ধকল (যেমন অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা) নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ও সঠিক পরিমাণ খাবার দিতে হবে। শেষ ২০ দিন পর্যাপ্ত পুষ্টিযুক্ত খাবার দিতে হবে, কারণ এই শেষ ২০ দিনে বাচ্চার ওজন ২৫০-৫০০ গ্রাম বৃদ্ধি পায় ও ওলান দুধ দেয়ার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা নেয়া না যায় তবে বাচ্চা দেয়ার পূর্বেই কিটোসিস রোগ দেখা দেয়।
তাই বলা যায় ড্রাই পিরিয়ডের সময় ৪৫-৬০ দিন রাখলে গাভী তার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারবে এবং পরবর্তী বাছুরের জন্য নিজের দেহকে সুষ্ঠুভাবে তৈরি করতে পারবে। আজ এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে গাভীকে ড্রাই পিরিয়ড পেলে তার দুধ উৎপাদন বাড়ে।
লেখকঃ
ডাঃ মোঃ তারিকুল ইসলাম
অপারেশন্স কো-অর্ডিনেটর, এম লাইভস্টক
এম পাওয়ার সোস্যাল এন্টাঃ লিঃ