পোকামাকড়

আমের হপার পোকা দমন ব্যবস্থাপনা

আম অত্যন্ত সুস্বাদু ও জনপ্রিয় একটি ফল। এফলের গাছ প্রায় সব বাড়ির বাগান বা ছাদ বাগানে অবশ্য পাওয়া যায়। আমের মুকুল আসার পর সকলের মনেই একটা খুশির দোলা কাজ করে। কিন্তু অনেকেরই আম গাছের মুকুল বিভিন্ন সময়ে নষ্ট হয়ে যায়। কোথাও তীব্র রোদ, কোথাও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি- এমন বিরূপ আবহাওয়া পরিস্থিতি মুকুল থেকে ফোটা আমের জন্য বয়ে আনে অশনিসংকেত। এ সময়ে আম চাষে সঠিক যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। এর প্রতিকার বা প্রতিরোধ সম্পর্কে বেশিরভাগই মানুষেরই অজানা।  সঠিক সময়ে রোগ ও পোকামাকড় দমন করতে ব্যর্থ হলে আমের ফলন মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে। আজ আমরা আমের অন্যতম প্রধান অনিষ্টকারী পোকা আমের হপার বা শোষক পোকার ক্ষতির ধরণ ও দমন ব্যবস্থা আলোচনা করবো।

ক্ষতির ধরণঃ

প্রথমত, কচি পাতা ও মুকুলের দন্ডগুলোতে ডিম পাড়ার সময় ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ফলে আক্রান্ত পাতা ও ফুল শুকিয়ে ঝরে যায়।

দ্বিতীয়ত, ডিম ফুটে নিম্ফ বের হওয়ার পর এরা কচি পাতা ও মুকুল থেকে রস চুষে খায়, ফলে মুকুলে ফুল শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে ঝরে যায়।

তৃতীয়ত, নিম্ফগুলো মুকুলের রস চোষার সাথে সাথে মলদ্বার দিয়ে এ সময় প্রচুর পরিমাণে আঠালো মধুরস (Honeydew) ত্যাগ করে যা মুকুলের ফুল ও গাছের পাতায় আটকে যায়। এ আঠালো পদার্থে ফুলের পরাগরেণু আটকে গিয়ে ফুলের পরাগ সংযোগ ক্রিয়া ব্যপকভাবে বিঘ্নিত হয়। পরবর্তীতে পাতা ও ফুলে আটকানো মধুরসে এক ধরণের ছত্রাক (Sooty mould fungus) জন্মায় এবং এরুপ ফুল ও পাতা কালো বর্ণ ধারণ করায় এগুলোর সালোক-সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ব্যহত হয়।

দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • পূর্ণ বয়স্ক আম গাছে বর্ষা মওসুমের শেষে বছরে একবার অপ্রয়োজনীয় মৃত ও অর্ধমৃত ডালপালা ছাঁটাই করে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করলে হপারের প্রাদুর্ভাব ৩০-৪০ শতাংশ কমে যায়।
  • আমের মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে একবার এবং এর একমাস পর আর একবার প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার সাইপারমেথ্রিন ১০ ইসি জাতীয় কীটনাশক যেমন- রিপকর্ড/রেলোথ্রিন/বাসাথ্রিন/এগ্রুপের অন্য নামের অথবা, ০.৫ মিলিলিটার ডেলটামেথ্রিন ২.৫ ইসি জাতীয় কীটনাশক যেমন- ডেসিস/এগ্রুপের অন্য নামের অথবা, ০.৫ মিলিলিটার ফেনভ্যালিরেট ২০ ইসি সুমিসাইডিন/মিলফেন/এগ্রুপের অন্য নামের কীটনাশক মিশিয়ে আমগাছের কাণ্ড, ডাল, পাতা এবং মুকুল ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করে আমের হপার দমন করা সম্ভব।
  • আমের হপার পোকার কারণে যেহেতু সুটিমোল্ড বা ঝুল রোগের আক্রমণ ঘটে সুতরাং এই রোগ দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে সালফার ৮০ ডব্লিউজি জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন- ইনসাফ/মনোভিট/এমি সালফ/থিয়োভিট/কুমুলাস/এগ্রুপের অন্য নামের ছত্রাকনাশক হপার পোকা দমনের জন্য ব্যবহার্য উপরোল্লিখিত কীটনাশকের সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
Avatar

চাষাবাদ ডেস্ক

About Author

You may also like

পোকামাকড়

ধানের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা – বাদামী গাছ ফড়িং বা কারেন্ট পোকা

|| এ. কে. আজা ফাহিম || বাদামী গাছ ফড়িংঃ ক্ষতির নমুনাঃ দমন ব্যবস্থাপনাঃ