হাসিমুখ

সিলেটে ব্রি ধান৯৮ জাতের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

সিলেটের বিশ্বনাথে আউশ মাঠে ব্রি ধান৯৮ জাতের সোনালী ফসলের শোভা দেখে ভালো ফলনের জন্য কৃষকরা খুবই আশাবাদি। এবার আউশের নতুন জাত ব্রিধান৯৮ চাষ করে ব্যাপক খুশি স্থানীয় কৃষকরা। এজাতের ধান চাষ করে স্থানীয় কৃষকরা অনেক লাভবান হয়েছেন বলে জানা গেছে।


আউশ ধানের একটি আদি মৌসুম। কৃষি কাজে পানির চাহিদা ব্যাপক। ধান চাষেও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রতি কেজি চাল উৎপাদনে ২৫০০-২৮০০ লিটার সেচের প্রয়োজন যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তবে আউশ মওসুমের চাষাবাদ অনেকটাই প্রাকৃতিক পানি নির্ভর হওয়ায় এটি একটি সেচ সাশ্রয়ী মওসুম। এ মৌসুমের ধানের জীবনকালও অনেক কম।


সিলেট অঞ্চলের শস্যের নিবিড়তা বাড়াতে আউশের ভূমিকা অপরিহার্য। আগের তুলনায় এই অঞ্চলে আউশের আবাদ এলাকাও অনেক বেড়েছে। নিত্যনতুন আধুনিক জাতসমূহ উদ্ভাবন করে চলেছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান গুলো আর সরেজমিনে এলাকানির্ভর ও চাহিদভিত্তিক উপযোগী জাত ও প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করে তুলতে কাজ করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সিলেটেও তার ব্যতিক্রম নয়।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত আউশের নতুন জাত ব্রিধান৯৮ সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সে ধারাবাহিকতায় এবার বিশ্বনাথে ব্রি ধান৯৮ জাত চাষ করে ব্যপক খুশি স্থানীয় কৃষকেরা। বিশ্বনাথ উপজেলার বিভিন্ন মাঠে দেখা গেছে এই জাতটির সোনালী পাকা ধান।


বিশ্বনাথ উপজেলা কৃষি অফিসে কর্মরত উপসহকারী কৃষি অফিসার এ. কে. আজাদ ফাহিম এর সাথে ব্রি ধান৯৮ জাতের কয়েকটি নমুনা শস্য কর্তনে অংশগ্রহণ করেন প্রতিবেদক। বিভিন্ন প্লটের নমুনা শস্য কর্তনের মাধ্যমে জাতটির হেক্টর প্রতি ফলন পাওয়া গেছে ৫ টন।


সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরসভার কামালপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক চমক আলী। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্তাবধানে এবার তিনি ৫ বিঘা জমিতে ব্রি ধান৯৮ চাষ করেছেন। চমক আলী বলেন, আমি পানির অভাবে সময় মতো লাগাতে পারি নাই। লাগানোর পরে পরপর দুবার বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়, তারপরেও যে ফলন হয়েছে তাতে আমি অনেক খুশি। অন্যজাতের তুলনা ব্রি ধান৯৮ চিকন হওয়ায় বাজারে দামও ভাল পাওয়া যাবে। খাইতেও ভাত ভাল হবে।


উপজেলার হরিকলস গ্রামের কৃষক সেবুল মিয়াও চাষ করেছেন ব্রি ধান৯৮ তিনি বলেন, ধান এখনও কাটিনি, মাঠে দেখেই অনুমান করছি ফলন অনেক ভাল হবে। আগামীতে আমি আরো বেশি এ জাতের ধান চাষ করবো।


বাংলাদেশ রাইস নলেজ ব্যাংক এর তথ্যসূত্রে জানা যায়,ব্রি ধান৯৮ একটি স্বল্প জীবনকালীন জাত। এর জীবনকাল রোপা আউশ মওসুমে বিআর২৬ এর সমান।এ জাতটির জীবনকাল স্বল্প হওয়ায় রোপা আউশ মওসুমে এ ধান আবাদ করা পর আমন ধান আবাদের সুযোগ তৈরী হবে।এ জাতে রোগ বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত অন্য জাতের চেয়ে অনেক কম।

ব্রি জাতের বৈশিষ্ট্যঃ
 পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০৩-১০৬ সে. মি.।
 ডিগপাতা খাড়া এবং পাতার রং গাঢ় সবুজ থাকে।
 চাল লম্বা, চিকন ও সাদা। ভাত ঝরঝরে।
 ১০০০ টি পুষ্ট ধানের ওজন ২২.৬ গ্রাম।
 চালে অ্যামাইলোজ ২৭.৯%।
 চালে প্রোটিনের পরিমাণ ৯.৫%।


বীজ বপনঃ
 ৫-১৭ বৈশাখ পর্যন্ত অর্থাৎ ১৮-৩০ এপ্রিল।
চারা রোপনঃ
 ২০-২৫ দিন বয়সের চারা রোপন করতে হয়।

জীবনকালঃ
 এ জাতটির জীবন কাল ১১২ দিন।
ফলনঃ
 গড় ফলন ৫.০৯ টন/ হেক্টর। (বিঘা প্রতি প্রায় ১৭ মন)
 তবে অনুক‚ল পরিবেশে ও উপযুক্ত পরিচর্যায় ৫.৮৭ টন/ হেক্টর পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।


বিশ্বনাথ উপজেলার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ কনক চন্দ্র রায় বলেন, ২০২০ সালে অনুমোদন পাওয়া ব্রি ধান৯৮ জাতটি আউশ মওসুমের একটি চমৎকার জাত। আউশ আবাদের সম্ভাবনাময় সিলেট অঞ্চলে আউশ আবাদ বৃদ্ধিতে জাতটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এজাতটির চাষকৃত প্রায় সকল জমিতে ভালো ফলন পরিলক্ষিত হচ্ছে। আশা করা যায় ব্রি ধান৯৮ বিশ্বনাথ উপজেলায় গড় ফলন জাতটির গড় ফলন ৫.০৯ টন/ হেক্টরকে ছাড়িয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, চলমান আউশ মওসুমে বিশ্বনাথ উপজেলায় নতুন এই জাতটির কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ১৩৭০ কেজি বীজ এবং উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে ৩ টনবীজ যথাক্রমে ২৭৫ ও ৩০০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এবছর বিশ্বনাথ উপজেলায় প্রায় ২১০ হেক্টর জমিতে নতুন এ জাতটির চাষাবাদ হয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়।

Avatar

চাষাবাদ ডেস্ক

About Author

You may also like

হাসিমুখ

ময়মনসিংহ অঞ্চলে শুদ্ধাচার পুরস্কার পেলেন উপসহকারী কৃষি অফিসার আজহারুল ইসলাম

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: ২০২২-২৩ অর্থবছরে ময়মনসিংহ অঞ্চলের মধ্যে উপসহকারী কৃষি অফিসার হিসেবে আজহারুল ইসলাম, উপসহকারী কৃষি অফিসার, আটপাড়া, নেত্রকোণাকে শুদ্ধাচার পুরস্কার