মুখোমুখি

আগাছানাশক ব্যবহারের অর্থ আপনি বাস্তুসম্পদকে হত্যা করছেন – বন্দনা শিবা

প্রশ্ন : আপনি কৃষি ক্ষেত্রে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিপক্ষে অবস্থান নিলেন কেন?

উত্তর : কারণ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং যে পৃথিবীর ক্ষুধা নিবারণের একমাত্র সমাধান এটি একটি মিথ্যা প্রচারণা। এটি একটি মিথ। গত বিশ বছরে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাত্র দুটি প্রযুক্তির বাণিজ্যিকায়ন হয়েছে। এক. বীজকে আরো বেশি করে আগাছানাশকের জন্য সহনশীল করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে আপনি আরো বেশি করে মোনসানটোর ‘রাউন্ডআপ’ নামের আগাছানাশকটি ব্যবহার করবেন। মাটিতে আরো বেশি করে বিষ ঢালবেন।

প্রথমত, পরিবেশবান্ধব কৃষির জন্য এটা কোনো কাঙ্ক্ষিত পদ্ধতি নয়। দ্বিতীয়ত, মোনসানটো যাকে ‘আগাছা’ বলছে সেটা গবাদী পশুর খাদ্য, আমাদের সবুজ শাক এবং কখনো কখনো আমাদের ঔষধি। অর্থাৎ আগাছা খাদ্যের একটি বিকল্প উৎস। সুতরাং আগাছানাশক ব্যবহারের অর্থ আপনি ইকোসাইড চালাচ্ছেন বা বাস্ত্তসম্পদকে হত্যা করছেন। আরেকটি প্রযুক্তি হলো ‘ব্যাসিলাস খুরিনজেন্সিস’ বা সংক্ষেপে ‘বিটি’ নামের বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া থেকে বিষ এনে বীজের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া যাতে এটা খেয়ে ক্ষতিকর কীট মারা যায়। অর্থাৎ আপনি বীজকেই একটি কীটনাশকে পরিণত করছেন। আজকে বিটি উদ্ভিদের পরাগরেণুর কারণে মৌমাছি আর প্রজাপতি মারা যাচ্ছে। বিটি তুলার গাছ খেয়ে গবাদীপশু মারা যাচ্ছে। এই বীজ যদি মানুষকে দীর্ঘমেয়াদে খাওয়ান তাহলে কি অবস্থাটা হবে? এরা আমাদের আরো বলছে, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং আমাদের অধিক পুষ্টি সরবরাহ করবে। তথাকথিত ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ গোল্ডেন রাইসের কথাই ধরুন। এতে ভিটামিন ‘এ’ আছে মাত্র ৩৪ মিলিগ্রাম। আমরা যে ধনে পাতা খাই, কিংবা ধরুন কারী পাতা, ওতে ভিটামিন ‘এ’ আছে ১৪০০ মিলিগ্রাম। এই সত্তরগুণ ভিটামিন হ্রাসকে আমাদের অধিক ভিটামিন সরবরাহ হিসেবে বিশ্বাস করতে হবে? এই মিথ্যা বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে করপোরেটদের হাতে বীজ আর খাদ্য সাপ্লাইয়ের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়ার জন্য। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়া করপোরেটদের পক্ষে বীজের ওপর পেটেন্ট দাবি করা সম্ভব নয়। আর বীজের পেটেন্ট থাকার অর্থ এর স্বত্বাধিকারী ছাড়া আর কেউ এ বীজ সংরক্ষণ, ব্যবহার, তৈরি কিংবা সম্প্রসারণ করতে পারবে না। মোনসানটো যখন একটা বীজের পেটেন্ট কিনে নিচ্ছে তখন যে কৃষক ওই বীজ সংরক্ষণ করবে সে হয়ে যাচ্ছে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি চোর। বায়ু কিংবা পতঙ্গের মাধ্যমে যখন জিএম জাতের সঙ্গে সাধারণ উদ্ভিদের পরাগায়ন হচ্ছে, যে কৃষকের ক্ষেতের ফসল জিএমের মাধ্যমে দূষিত হয়ে গেল মোনসানটোর কাছে সেও চোর বলে গণ্য হবে। কারণ মোনসানটো বীজের যে গুণাবলীগুলোর ওপর পেটেন্ট নিয়েছে সেটা যে উদ্ভিদেই পাওয়া যাবে সেটার ওপরেই তার মালিকানা দাবি করতে পারবে। অর্থাৎ এ বিকৃত, স্বৈরাচারী নিয়মে অভিযুক্তকে নয়, আসামি হতে হচ্ছে ভিকটিমকে। সুতরাং মোনসানটো একদিকে পেটেন্ট করে বীজের ওপর মালিকানা নিয়ে নিচ্ছে এবং অন্যদিকে অন্যের বীজ দূষিত করে বাকি বীজের ওপর তার দখলিস্বত্ব কায়েম করছে। এটি অত্যন্ত নোংরা এক অন্যায়, অসম্ভব অনাচার ও চরম অনৈতিক আচরণ। এটি চলতে পারে না।

প্রশ্ন : জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়া এবং বীজকে পণ্যে পরিণত না করে কিভাবে এ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ক্ষুধা নিবারণ হবে?

উত্তর : আমার মনে হয় যে বিষয়টা আমাদের বোঝা দরকার সেটা হলো ক্ষুধা মূলত একটি গ্রামীণ ইস্যু। এটা মূলত তৃতীয় বিশ্বের এমন একটা জনসাধারণের মধ্যে প্রকট যারা কৃষক। যারা নিজেরাই খাদ্য উৎপাদন করছে তারা কেন ক্ষুধার্ত থাকবে? তারা ক্ষুধার্থ কারণ তারা যা উৎপাদন করছে তার সবটাই বিক্রি করে দিতে হচ্ছে দুর্মূল্য বীজ ও দুর্মূল্য কেমিক্যাল কেনার জন্য। উচ্চ মূল্য কেমিক্যালের ওপর নির্ভরশীল কৃষি ব্যবস্থা ক্ষুধা তৈরির একটি পারফেক্ট রেসিপি। দ্বিতীয়ত, রাসায়নিক পদার্থের ওপর নির্ভরশীল কৃষি মডেল হলো মনোকালচার কিংবা এক ফসলি। যার পুষ্টি উৎপাদনক্ষমতা অত্যন্ত কম। রাসায়নিক সার কিংবা কেমিক্যাল ছাড়া মিশ্র ফসল চাষ করলে প্রতি একরে মনোকালচারের চেয়ে পাঁচ থেকে দশ গুণ বেশি পুষ্টি উৎপাদিত হয়। সুতরাং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে লাভ বাড়ানোর জন্য যে মনোকালচার চালু করা হয়েছে সেটি স্থানীয় পর্যায়ে পুষ্টিহীনতা ও ক্ষুধা বৃদ্ধির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। যদি পৃথিবীর খাদ্য যোগাতে হয় তাহলে সেটা যোগাতে হবে স্থানীয় পর্যায়ে, স্থানীয় বাজারের জন্য স্থানীয় প্রজাতির ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে। কিছু কিছু পণ্য রফতানি করাই যায়, কিন্তু সেটা যেন প্রধান খাদ্য না হয়। খাবারে একটু বেশি ঝাঁঝের জন্য ভারতের মশলা কিংবা মাঝে মাঝে গুয়াতেমালার কফিতে তো কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু একটি পুরো জাতিকে খাদ্যের জন্য আমদানিনির্ভর করে তোলার সঙ্গে ক্ষুধামোচনের কোনো সম্পর্ক নেই, সম্পর্ক আছে খাবারের সাপ্লাই নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে।

প্রশ্ন : একজন পদার্থবিদ হয়ে আপনি যখন বিশ্ব ক্ষুধামুক্তির উপায় হিসেবে এ গোষ্ঠীর অর্থ এবং সমর্থনপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের তৈরি করা তথ্য-উপাত্তকে অস্বীকার করেন ও বানোয়াট আখ্যা দেন তখন ব্যাপারটা নিশ্চয়ই তাদের অস্বস্তিতে ফেলে দেবে?

উত্তর : (হাসি) একদম। তাদের ক্ষেপিয়ে তুলবার জন্য আমি যে একজন নারী এটাই যথেষ্ট। তার ওপর আমি একজন তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক, আমি একজন পদার্থবিদ এবং আমি একটি সংখ্যার সঙ্গে আরেকটি সংখ্যা যোগ করতে পারি। সুতরাং আমি যখন তাদের এসব গোঁজামিল দেওয়া হিসাব-নিকাশ ধরে ফেলি তাদের মাথা তো একটু খারাপ হবেই। তারা যেটা করছে তার নাম জোচ্চুরি। যেমন ধরুন ‘সবুজবিপ্লব’-এর কথা। তাদের দাবি অনুযায়ী সবুজ বিপ্লবে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণটা কি? কারণ তারা ধান ও গমের বাইরে আর কোনো ফসলের হিসাব গোনায় আনেনি। একজন ভারতীয় তো শুধু ধান আর গম খেয়েই বাঁচে না, আমরা ডাল খাই, তেলবীজ খাই, আমরা জোয়ার খাই। সবুজ বিপ্লবের কারণে সব ধ্বংস হয়ে গেল। সেগুলো তো তারা কাউকে জানতে দেয়নি। ঠিক সেইভাবে পুরো জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কৃষকের আয় ও উৎপাদন বাড়ায় এ দাবিটি একটি বানোয়াট প্রচারণা। মোনসানটোর হিসাব সব সময় বলে আসছে, তাদের পণ্য ব্যবহার করে প্রতি বছর ভারতের কৃষকরা আড়াই কোটির বেশি মার্কিন ডলার আয় করছে। তারা যদি সত্যিই এত বেশি আয় করে থাকে তাহলে তাদের আত্মহত্যা করার দরকার কি? যেসব কৃষক মোনসানটোর বিটি তুলাচাষ করছে তাদের সবাই ঋণগ্রস্ত। কারণ প্রতি কেজি তুলার বীজ তারা সাত রুপির জায়গায় সতের হাজার রুপি দিয়ে কিনছে। কীটনাশকের ব্যবহার বেড়েছে ১৩ গুণ বেশি। সুতরাং যে প্যাকেজে তারা বিটি বীজ কিনছে সেটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কৃষকের এ অর্থনৈতিক দুর্দশার কথা তারা কখনো বলে না। তারা নিজেদের সুবিধামতো অংক বানায়, সুবিধামতো অংক পাল্টায়। আমরা যে কেবল জেনেটিক দূষণের যুগেই বাস করছি তা নয় আমরা আসলে একই সঙ্গে বাস করছি একটি দূষিত জ্ঞানের যুগে যখন সত্যিকার জ্ঞান সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এটা গণতন্ত্র আর নিরাপত্তাকে আশঙ্কায় ফেলে দিয়েছে।

বাণিজ্যিক চাষাবাদ আমাদের শিখিয়েছে উর্বর মাটি বলতে কিছু নেই। মাটি যেন একটা প্লাস্টিকের কন্টেইনার সেখানে আমাদের নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম আর ফসফরাস যোগ করতে হবে। আমাদের বলা হয়েছে, বীজ মানে ল্যাবরেটরিতে উৎপাদিত একটি পণ্য যার ওপর তার উদ্ভাবক কোম্পানিটির পেটেন্ট থাকবে। কোটি কোটি বছর ধরে আমাদের কৃষক আমাদের খাদ্য জোগানকে তাদের দায়িত্ব হিসেবে নিয়ে যে মিরাকল দেখিয়ে আসছেন এই কোম্পানিগুলোর পক্ষে সেটা দেখানো সম্ভব নয়। তাদের বাণিজ্যের মূলে আছে সেপারেশন (বিচ্ছিন্নতা)। আমি বিশ্বাস করি, দায়িত্ববোধ থেকে মানুষের অধিকারকে আলাদা করে দিলে সব ধরনের একনায়কতন্ত্রের সূচনা হয়। আপনার পক্ষে তখনই মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করা সম্ভব হবে যখন আপনার কাজটির সঙ্গে একটি দায়িত্ববোধ এসে যুক্ত হবে।

প্রশ্ন : আমাদের পক্ষে কি করা সম্ভব বলে আপনার মনে হয়?

উত্তর : আমার মনে হয় আমাদের সবার আগে এ উপলব্ধিতে আসতে হবে, যে খাবারটা আমরা খাই সেটা কোনো না কোনো বীজ থেকে, কোনো না কোনো মাটিতে কৃষকের যত্ন ও ভালোবাসায় উৎপন্ন হয়েছে। এ সংযোগটা বোঝা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, খাদ্য কারগিলের কন্টেইনার কিংবা ওয়াল মার্টের তাকে রাখা কোনো পণ্য নয়, সেটা বুঝতে হবে। বুঝতে হবে খাদ্য আমাদের রক্ত, মাংস ও অস্থি। এ বিষয়গুলো যতদিন না বুঝব আমরা কোনো কিছু না জেনেই মোনসানটোর পেটেন্ট করা সত্তর রকমের খাদ্য কিনব। আমরা মোনসানটোর ইচ্ছার দাস হয়ে যাব। সুতরাং প্রতিদিনের প্রতি মুহূর্তের খাদ্য গ্রহণ মানে আমার স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করা, আমার স্বাধীনতাকে নির্মাণ করা এবং এ কাজটি সজ্ঞানে, নিজের মতো প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের করতে হবে এবং তখনই আমাদের উচিত হবে সরকারকে গণবিমুখী নীতি হতে গণমুখী নীতির পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা।

সত্তরের দশকে বৃক্ষ রক্ষার জন্য বিখ্যাত চিপকো আন্দোলনের মাধ্যমে বন্দনা শিব ভারতের পরিবেশ আন্দোলনে সরব হয়ে ওঠেন। একাধারে দার্শনিক, লেখিকা, পরিবেশবাদী, ইকোফেমিনিস্ট ও বিশ্বায়নবিরোধী এই নারীনেত্রী পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি লাভ করলেও বিশ্বায়নের মানবিক ও পরিবেশগত বিপর্যয় তাকে পরিবেশ আন্দোলনের পথে নিয়ে আসে। তিনি জেরি ম্যানডের, রালফ নাদের ও জেরেমি রিফকিনদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম অন গ্লোবালাইজেশন। বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে তিনি গান্ধীবাদকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে চলেছেন। ভারতে প্রতিষ্ঠা করেছেন নাভদানিয়া নামক কৃষকসংগঠন ও বীজা বিদ্যাপীঠ নামক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে প্রাকৃতিক উপায়ে বীজ সংরক্ষণ সম্পর্কে হাতেকলমে প্রশিক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশসংক্রান্ত গবেষণা করা হয়। বন্দনা শিব কৃষিতে বায়োটেকনোলজি ব্যবহারের বিরুদ্ধে অত্যন্ত সোচ্চার।

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিডিয়াতে তিনি বায়োডাইভারসিটি, বায়োএথিক্স, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটসের বিরুদ্ধে তার অবস্থানের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশে বহুজাতিক কৃষি বাণিজ্য কোম্পানি মোনসানটো তার জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড বীজ, আগাছানাশক ও কেমিক্যাল নিয়ে প্রবেশ করার সব প্রস্ত্ততি সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশ সরকারও বায়োটেকনোলজি বিল-২০১০ পাস করে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে বাণিজ্যিক পর্যায়ে জেনিটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড বীজ উৎপাদন ও ব্যবহারের প্রস্ত্ততি সম্পন্ন করেছে। এ লক্ষ্যে কিছুদিন আগে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার একটি প্রযুক্তি মেধাবিনিময় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ চুক্তির আওতায় ভারতে উৎপাদিত প্রজাতি ‘বিটি বেগুন’র পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করছে বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ সেন্টার। অথচ মোনসানটোর সহায়তায় বিটি বেগুন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা তৈরি করলেও এর সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকি থাকায় ভারত সরকার এর বীজ বিপণন ভারতে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে। সমগ্র ইউরোপে যখন এখনো জিএম (জেনেটিক্যালি মডিফায়েড) খাদ্য উৎপাদন নিষিদ্ধ এবং সারাবিশ্বে যখন জিএম খাদ্যের বিরুদ্ধে মানুষ ক্রমাগত সচেতন হয়ে উঠছে, ঠিক সেই মুহূর্তে জনগণের মতামতের জন্য কোনো অপেক্ষা না করে সরকার কেন এ সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত দ্রুততার ও গুরুত্বের সঙ্গে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। প্রাসঙ্গিকতার বিবেচনায় জিএম বীজের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব ও বহুজাতিক কৃষি কোম্পানি মোনসানটোর উদ্দেশ্য এবং আগ্রাসন সম্পর্কে জনগণের অভিহিত হওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে জানা দরকার, দেশের বিজ্ঞানীদের উৎপাদিত জিএম বীজ ব্যবহার করাই যেখানে অত্যন্ত বিপজ্জনক সেখানে আমদানি করা জিএম বীজ চাষ করা কি অপূরণীয় মানবিক এবং পরিবেশগত বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে না বাংলাদেশের কৃষক, ভোক্তা, অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য? বিষয়টি সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদানের লক্ষ্যে ডক্টর বন্দনা শিবের একটি সাক্ষাৎকারের সারসংক্ষেপ এখানে উল্লেখ করা হলো।

বন্দনা শিবা হচ্ছেন একজন ভারতীয় পণ্ডিত, পরিবেশবাদী সক্রিয় কর্মী, খাদ্য সার্বভৌমত্বের প্রবক্তা এবং পরিবর্তিত বিশ্বায়নের লেখিকা। শিবা বর্তমানে দিল্লিতে বসবাস করেন, তিনি ২০টিরও অধিক বই লিখেছেন। তিনি বিশ্বায়নের আন্তর্জাতিক ফোরামের অন্যতম নেতা ও বোর্ড সদস্য (জেরি ম্যান্ডার, রাফ নাদের, জেরেমি রিফকিনের সঙ্গে), এবং পরিবর্তন-বিশ্বায়ন আন্দোলন নামে পরিচিত বৈশ্বিক সংহতি আন্দোলনের একজন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি অনেক ঐতিহ্যবাহী প্রথাগুলোর বিজ্ঞতার জন্য যুক্তি দেখিয়েছেন, যেমন ভারতের বৈদিক ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করে, বৈদিক ইকোলজি (র‍্যাঙ্কোর প্রাইম কর্তৃক প্রকাশিত) বইয়ে তার সাক্ষাৎকারে এটি স্পষ্ট। তিনি স্পেনের সমাজতান্ত্রিক দল থিংক ট্যাঙ্ক-এর ফান্ডাশন আইডিয়াসের বৈজ্ঞানিক কমিটির একজন সদস্য। তিনি অংশগ্রহণমূলক সমাজের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা’র একজন সদস্য। ১৯৯৩,সালে, তিনি রাইট লাইভলিহুড পুরস্কারে ভূষিত হন, যা বিকল্প নোবেল পুরস্কার হিসাবে পরিচিত।

Avatar

চাষাবাদ ডেস্ক

About Author