রোগ

ধানের হিটশক হলে কি করণীয়?

তীব্র তাপদাহে মানুষ যেমন হিটস্ট্রোক করে, মাত্রাতিরিক্ত গরমে ধানগাছও তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেটাকে বলা হয় হিট ইনজুরি বা হিটশক। হিটশক হলে ধানের ফুল পুড়ে যায়, দানা চিটা হয়ে যায়। মূলত ধানের ফুল ফোটার সময়ই এ ধরনের ক্ষতি হয়ে থাকে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রা বাড়া অথবা কমা, দুই কারণেই হিটশক বা হিট ইনজুরি হতে পারে। ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে হিটশকের মাত্রা ধরা হয়।
বোরো মওসুম শুরু হয় শীতে নভেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ) মাসে। আর শেষ হয় চরম গরমে এপ্রিল-মে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ) মাসে। ধান ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না। ফুল ফোটার সময় এক-দুই ঘণ্টা এ তাপমাত্রা বিরাজ করলে ধান মাত্রাতিরিক্ত চিটা হয়ে যায়।
যখন তাপপ্রবাহ হয় এবং সে সময় যদি বৃষ্টি না থাকে, তখনই ধানের হিট ইনজুরি বা হিটশক হয়। অর্থাৎ বৃষ্টিহীন তাপপ্রবাহের সময় গরম বাতাসের কারণে ধানের শীষ থেকে পানি বের হয়ে যায়। ফুল শুকিয়ে যায়। ফলে ধান চিটা হয়ে যায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে দেশের প্রধান ফসল বোরোতে হিটশক বা হিট ইনজুরি একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

করণীয় কী?

  • ধানের ফ্লাওয়ারিং স্টেজে হিটশক খুব বেশি ক্ষতি করে।তাই তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে ধানকে রক্ষা করতে হলে বোরো ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখতে হবে।
  • ধানের শীষে দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই দুই থেকে তিন ইঞ্চি পানি রাখতে হবে।
  • ১০ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম এমওপি সার মিশিয়ে ৫ শতাংশ হিসেবে স্প্রে করুন। এছাড়াও বিঘা প্রতি ৫ কেজি হিসেবে এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করুন।
  • ধানের ফুল অবস্থায় স্প্রে করার প্রয়োজন হলে অবশ্য পড়ন্ত বিকেলে বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে। কারণ সকালবেলা সাধারণত ৭-১১ টা পর্যন্ত ধানের পরাগায়ণ হয়ে থাকে। অপরিকল্পিত স্প্রে করা থেকে বিরত থাকুন।

প্রতিবছর বোরো মৌসুমে সফলভাবে ধান ঘরে তোলা খুবই চ্যালেঞ্জিং। কারণ আকস্মিক বন্যা, শিলাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির কারণে হাওরের ধান ঠিকমতো ঘরে তোলা নিয়ে প্রতিবছরই আতঙ্কে থাকতে হয় কৃষকদের। হিট ইনজুরি বা হিটশক এখন নতুন আতঙ্কের নাম। জলবায়ু প্রভাবের নতুন অভিঘাতে তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় আগামীতে এ সমস্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন গবেষকরা। হিটশকের পরবর্তী বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য উচ্চ তাপমাত্রাসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবনকে একমাত্র কার্যকর উপায় হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

আশার খবর হচ্ছে, আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় ২০১৩ সাল থেকে উচ্চ তাপমাত্রাসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনে গবেষণা শুরু করে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ই্ন্সটিটিউট -ব্রি।হিটশক প্রতিরোধী ধানের উচ্চ ফলনশীল নতুন জাত অবমুক্ত হলে কিছুটা স্বস্তি পাবে কৃষক, মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Avatar

চাষাবাদ ডেস্ক

About Author

You may also like

রোগ

ধানের ব্লাস্ট রোগ ও তার প্রতিকার (ব্লাস্ট রোগের A to Z)

এ. কে. আজাদ ফাহিম ধানের ব্লাস্ট রোগের অর্থনৈতিক গুরুত্বঃধানের ব্লাস্ট একটি ছত্রাকজনিত মারাত্মক ক্ষতিকারক রোগ। বোরো ও আমন মওসুমে সাধারণতঃ
রোগ

ধানের রোগ ও প্রতিকার

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ৩২টি রোগ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকায় এবং বিভিন্ন জাতের ধানে শনাক্ত করেছে।