হাসিমুখ

কাশিয়ানীর শতবর্ষী আম গাছের স্নিগ্ধ ছায়ায় কাটিয়ে দেওয়া যায় সারাটি দিন

এ. কে. আজাদ ফাহিম

আমকে বলা হয় ফলের রাজা। আর আম গাছ হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় গাছ। আর কোন আমগাছের রাজত্ব যদি টিকে থাকে শতবছরেরও বেশি সময় ধরে। তাহলেতো গল্পটা শুনতেই হয়। নিজের চোখে দেখার সুযোগ পেলেও মন্দ হবে না।

বলছিলাম গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের হিরণ্য কান্দি গ্রামের শতবর্ষী আমগাছের কথা।

আমগাছটির বয়স নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে মতের ভিন্নতা রয়েছে। কেউ বলেন, এর বয়স শতবছরের বেশি। কেউ বলেন দেড়শ বছর। আবার অনেকেই আছেন, বয়স বাড়িয়ে দুইশ বছরে নিতেও কার্পন্য করেন না। তবে যতই মতবেদ থাকুক, শয়ের নিচে বয়স নামাতে কেউই রাজি নয়।

কেনই বা নামাবেন? প্রকান্ড চেহারা নিয়ে প্রায় দুই বিঘা জমিতে ছড়িয়ে আছে যে গাছ, তাকে অন্তত শতবর্ষী না বলে উপায় নেই। তাই গাছটির পরিচিতি এখন শতবর্ষী গাছ হিসেবে।

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে হিরণ্যকান্দি বাসস্ট্যান্ডে নেমে পূর্ব দিকের আঁকা-বাঁকা সড়ক দিয়ে আনুমানিক ৩০০ গজ অগ্রসর হলেই দেখা মিলবে এ গাছের। মহাসড়কে হিরণ্যকান্দি বাসস্ট্যান্ডের পাশেই ‘শতবর্ষী আমগাছ’ লিখে তির চিহ্ন দিয়ে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে সড়কটিকে চিহ্নিত করা আছে।

প্রায় ৫৪ শতাংশ জমির ওপর শাখা-প্রশাখা মেলে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়াকৃতির এই প্রাচীন গাছটি। এ জায়গার মালিক এখন বাদশা শেখ। তিনি বলেন, ‘দেশি প্রজাতির এই আমগাছটি আমাদের পূর্বপুরুষের কেউ রোপণ করেছেন। কে করেছেন তা জানা নেই আমার। আমার বাবা, আমার দাদাও এ আকারেই দেখেছেন গাছটি।’

হিরণ্যকান্দির এ গাছে প্রচুর আম ধরে। কাঁচা আম টক কিন্তু পাকলে সুমিষ্ট হয়। ফলনভেদে কোনো বছর ৫০০ মণ আবার কোনো বছর ৭০০ মণ আম ধরে গাছটিতে।

গাছটি দেখতে প্রতিদিনই অসংখ্য লোক এখানে ছুটে আসেন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে। আবার অনেকে পিকনিক করতেও আসেন এখানে। নববর্ষ, পূজা বা দুই ঈদের সময় দর্শনার্থীদের পদচারণায় গিজ গিজ করে আমগাছটির চত্বর।

বিশালাকৃতির গাছটির নয়টি কাণ্ড বটগাছের কাণ্ডের মতো মাটি ছুঁয়ে রয়েছে। গাছের নিচে অন্য কোনো গাছ নেই। একটু দূর থেকে দেখলে মনে হয় সবুজ রঙের একটি আস্ত পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে। সব মিলিয়ে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য।

এছাড়াও এই শতবর্ষী আমগাছটি জীববৈচিত্রের এক নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখপাখি আর কাঠবিড়ালীর আনাগোনাও আনন্দ দেয় দর্শনার্থীদের।

এদিকে আম গাছটিকে ঘিরে এলাকাটি পর্যটন স্পটে রূপান্তর করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দর্শনার্থী ও এলাকাবাসী।

গাছ মানুষের পরম বন্ধু। গাছ বিভিন্ন ভাবে আমাদের উপকার করে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, অক্সিজেন, ওষুধ ইত্যাদি আমরা গাছ থেকে পাই। গাছের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। প্রাণী জগতের অস্তিত্ব রক্ষায় উদ্ভিদের কোন বিকল্প নেই। গাছ আছে বলেই পৃথিবী হয়তো আজও বসবাসের যোগ্য।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ বছর বেঁচে থাকা একটি গাছ;

  • বায়ুদূষণ থেকে পরিবেশ রক্ষায় ১০ লাখ টাকা,
  • জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন দেয় ৫ লাখ টাকা,
  • বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা,
  • মাটির ক্ষয়রোধ ও উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা,
  • বৃক্ষে বসবাসকারী প্রাণীদের খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা,
  • আসবাবপত্র, জ্বালানি কাঠ ও ফল সরবরাহ করে ৫ লাখ টাকা,
  • বিভিন্ন জীব-জন্তুর খাদ্য জোগান দিয়ে বাঁচায় আরও ৪০ হাজার টাকা।

একটি বৃক্ষের আর্থিক সুবিধার মোট মূল্য ৫০ বছরে দাঁড়ায় ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

যেসব এলাকায় গাছ বেশি, সেখানে বন্যা, ঝড় তেমন ক্ষতি করতে পারে না। গাছপালা মায়ের আঁচলের মতো মানুষকে আগলে রেখে রক্ষা করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে।

তাই আসুন গাছ লাগাই – পরিবেশ বাঁচাই। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রতিবছর অন্তত একটি বৃক্ষের চারা রোপণ করি এবং নিয়মিত পরিচর্যা করি।

লেখকঃ এ. কে. আজাদ ফাহিম, কৃষি উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এক্টিভিস্ট।

Avatar

চাষাবাদ ডেস্ক

About Author

You may also like

হাসিমুখ

সিলেটে ব্রি ধান৯৮ জাতের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

সিলেটের বিশ্বনাথে আউশ মাঠে ব্রি ধান৯৮ জাতের সোনালী ফসলের শোভা দেখে ভালো ফলনের জন্য কৃষকরা খুবই আশাবাদি। এবার আউশের নতুন
হাসিমুখ

ময়মনসিংহ অঞ্চলে শুদ্ধাচার পুরস্কার পেলেন উপসহকারী কৃষি অফিসার আজহারুল ইসলাম

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: ২০২২-২৩ অর্থবছরে ময়মনসিংহ অঞ্চলের মধ্যে উপসহকারী কৃষি অফিসার হিসেবে আজহারুল ইসলাম, উপসহকারী কৃষি অফিসার, আটপাড়া, নেত্রকোণাকে শুদ্ধাচার পুরস্কার