চলমান কৃষি

দেশে প্রোবায়োটিকের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলো

বাংলাদেশের একটি কোম্পানি পজেটিভ বায়োটেক লিমিটেড দেশে প্রথমবারের মতো প্রোবায়োটিকের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। কোম্পানিটি আনুষ্ঠানিকভাবে তিন বছর আগে যাত্রা শুরু করে। পজেটিভ বায়োটেক সাভারে প্রথাগত বায়োটেক প্রক্রিয়া এবং পেটেন্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি ও মাছের জন্য তিনটি প্রোবায়োটিক বাজারজাত আরম্ভ করেছে।

প্রসঙ্গত, বেশ কয়েক বছর ধরেই ফিড মিলগুলো (মৎস্য ও প্রাণী খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান) প্রোবায়োটিক ব্যবহার করছে, বর্তমানে যা আমদানিনির্ভর। বছরে দেশে প্রোবায়োটিকের বাজার প্রায় ৫০০০ কোটি টাকার।

বিশ্লেষকরা জানান, প্রোবায়োটিক হলো জীবন্ত ‘মাইক্রো-অর্গানিজম’ বা মাইক্রোবায়োম, যা বেশি পরিমাণে খেলে অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়ার ভারসাম্য বজায় থাকে। ভালো ব্যাক্টেরিয়াগুলো খারাপ ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করে। এ ছাড়া উপকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলো অন্ত্রের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি। কারণ সুস্থ থাকতে হলে এদের মাত্রা অন্ত্রে থাকা ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার তুলনায় বেশি হতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট ও সিনিয়র ইন্ডাস্ট্রিয়াল মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও পজিটিভ বায়োটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফায়জুর রহমান জানান, আমাদের প্রোবায়োটিকগুলো টেকসই গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি এবং মাছ চাষের জন্য ভালো করছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্রোবায়োটিক আমদানি থেকে বেশি কার্যকর। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন কোম্পানির পাশাপাশি একটি বড় বিদেশি কোম্পানি আমাদের প্রোবায়োটিক নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। যা তারা লোকাল মার্কেটে বাজারজাত করবে।

ফয়জুর রহমান আরও জানান, পজেটিভ বায়োটেক এখন প্রতি মাসে ১৫ টন প্রোবায়োটিক উৎপাদন করছে। তবে এটি দেশের বর্তমান চাহিদার তুলনায় মাত্র ৩ শতাংশ। দেশে প্রতিমাসে প্রায় ৫০০ টনের মতো প্রয়োজন।

অপরদিকে দেশি প্রোবায়োটিকের কার্যকারিতা আমদানি প্রোবায়োটিকের চেয়ে বেশি। এতে উৎপাদন বৃদ্ধির হারও প্রায় দ্বিগুণ হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষকের গবেষণায় জানা গেছে এসব তথ্য।

ওই গবেষণা দলের প্রধান ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান।

গবেষণায় জানা গেছে, আমদানির চেয়ে দেশি প্রোবায়োটিকের কার্যকারিতা বেশি। কারণ বেশির ভাগ প্রোবায়োটিকগুলো অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হয় এবং সেগুলো তাদের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া প্রোবায়োটিক। তাই নতুন পরিবেশ তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং এবং স্থানীয় স্ট্রেনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা বেশ কঠিন। তাদের কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই স্থানীয় পরিবেশে এবং সুস্থ জীবদেহে প্রাপ্ত স্বাভাবিকভাবে উপকার প্রদানকারী প্রোবায়োটিক যে কোনো বিদেশি প্রোবায়োটিক অপেক্ষা অনেক ভালো।

পজেটিভ বায়োটেকের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ড. নূর হোসেন জানান, আমাদের উৎপাদিত প্রোবায়োটিকের ফর্মুলেশন দেশে অনন্য। এটি আমদানি করা প্রোবায়োটিকের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। দেশি প্রোবায়োটিকগুলো শতভাগ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি, যা ভিটামিন, খনিজ, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর সাথে সম্পূরক। এটি ব্যবহারে গবাদিপশুর দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। হাঁস-মুরগিতে বাড়তি মাংস হচ্ছে। স্বাদু পানির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

Avatar

চাষাবাদ ডেস্ক

About Author

You may also like

চলমান কৃষি

ইরির তত্ত্বাবধানে খাগড়াছড়িতে উচ্চ ফলনশীল ধানের বাম্পার ফলন

খাগড়াছড়ি মহালছড়ি উপজেলার পাকিজাছড়ি গ্রামে এবং সদর উপজেলার ভূয়াছড়ির নতুন বাজার গ্রামে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ইরি) তত্ত্বাবধানে কম সময়ে
চলমান কৃষি

সিলেটের বিশ্বনাথে ৩ দিন ব্যাপী কৃষি মেলার উদ্বোধন

সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলা কৃষি অফিসের আয়োজনে ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ‘কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় ৩ দিনব্যাপী (৮-১০ মে) কৃষি