ফুল ও ফল

দেশে চাষ হচ্ছে রফতানিযোগ্য সম্ভাবনাময়ী এম ডি-২ আনারস

::এ. কে. আজাদ ফাহিম::

এমডি-২ আনারস বিশ্ব বাজারে অত্যন্ত চাহিদা সম্পন্ন অম্ল মিষ্টতার একটি জাত। মিষ্টতার ব্রিক্স মান-১৪%। দেশে বর্তমানে প্রচলিত জাতের আনারস যেখানে পাকার পর মেয়াদ থাকে এক সপ্তাহ, সেখানে এমডি-২ জাতের আনারস এক মাস সংরক্ষণ করা যায়। এটি সুস্বাদু, পুষ্টিগুণ ও মনোমুগ্ধকর সুবাস সমৃদ্ধ ফল।

এমডি-২ আনারসের বিশেষ প্রয়োজনীতা

আনারসের এমডি-২ জাতের জনপ্রিয়তার উল্লেখযোগ্য অনেক কারন রযেছে। এজাতের চাষ প্রণালীও তুলনামূলক সহজ। মুকুট ভাসা থাকায় ভক্ষণশীল অংশের পরিমাণ বেশি থাকে। সাকারের আকার অনুযায়ী ১২-১৬ মাসে উৎপাদন হয়। সাকার উৎপাদন ক্ষমতা বেশি। বৃষ্টির পানি ব্যতিত অতিরিক্ত সেচের প্রয়োজন হয় না। এ জাতের ফলন প্রচলিত জাত থেকে দ্বিগুণ হয়ে থাকে।

ঔষধি গুণাগুণ

এমডি-২ আনারস দূরারোগ্য হৃদপিণ্ডের রোগ, ডায়াবেটিস, কিছু কিছু ক্যান্সারের ক্ষতির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও হজমে সহায়তা করে, প্রদাহ বিরোধী উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও রক্ত তরল করার কাজ তরান্বিত করে।

পুষ্টি গুণাগুণ

এমডি-২ জাতের আনারসে প্রচলিত অন্য জাতের চেয়ে ৩-৪ গুণ বেশি ভিটামিন-সি রয়েছে। এছাড়াও অল্প পরিমাণে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-কে, জিঙ্ক, ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম রয়েছে।

১০০ গ্রাম আনারসের পুষ্টিমান
ক্যালরি – ৮২.৫ গ্রাম, প্রোটিন – ৬০ গ্রাম, শর্করা – ১১.৮২ গ্রাম, ফাইবার – ১.৪ গ্রাম, ফ্যাট -০.০১ গ্রাম।

রিকোমেন্ডেড ডায়েটারি ইনটেক অনুযায়ী বিদ্যমান আছে
ভিটামিন সি-১৩১%, ম্যাঙ্গানিজ-৭৬%, ভিটামিন বি৬-৯%, কপার – ৯%, থায়ামিন – ৯%, ফোলেট – ৭%, পটাশিয়াম – ৫%, ম্যাগনেসিয়াম – ৫%, নিয়াসিন – ৪%, প্যানথেনিক – ৪%, রিবোফ্লাভিন-৩%, আয়রন – ৩%।

মাটি
এম ডি-২ জাতের আনারসের জন্য সুনিষ্কাশিত দোঁ-আশ, বেলে দোঁ-আশ মাটি উপযোগি। তবে অম্ল মাটি বেশি ভালো। উপযুক্ত মাটির পিএইচ মান ৫.৫-৬.০।

জমি তৈরি
আনারসের জন্য গভীর চাষের প্রয়োজন হয়। পাহাড়, টিলা এবং উঁচু যেস্থানে বৃষ্টির পানি দাঁড়ায় না সেস্থানে ৩০ ইঞ্চি প্রশস্থ বেড তৈরি করতে হবে। দুই বেডের মাঝখানে ৩০ ইঞ্চি সেচ নালা রাখতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ১৮ ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ১৫ ইঞ্চি রাখতে হবে।

সারের পরিমাণ
এক বিঘা জমির জন্য অনুমোদিত সারের মাত্রা হচ্ছে :
পঁচা গোবর বা কম্পোস্ট – ২৫ কেজি, ইউরিয়া – ৫২ কেজি, ডিএপি – ৮.৫ কেজি, এমওপি – ৩৩ কেজি, জিপসাম – ২.৬ কেজি, জিংক সালফেট – ৮০০ গ্রাম।
ইউরিয়া ও পটাশ সার চারা রোপণের ৪-৫ মাস পর থেকে শুরু করে ৫ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। অন্যান্য সার বেড তৈরির সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
জমির উর্বরতা অনুযায়ী সারের মাত্রা কম বেশি হতে পারে।

রোপণের সময়
বর্ষার পর অক্টোবর-মার্চ পর্যন্ত আনারস রোপণ করা যায়। তবে অক্টোবর-নভেম্বর মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।

মুড়ি ও সাথী ফসল চাষ
আনারস চাষের আরেকটি সুবিধা হলো মুড়ি ফসলের চাষ। অন্যান্য জাতের ন্যায় এ জাতের সাথেও সাথী ফসল হিসেবে আদা, সরিষা, কলাই, সয়াবিন, কচু প্রভৃতি চাষ করা যায়।

ফলন
এ জাতের আনারসের বিঘা প্রতি ফলন ৪.০-৪.৫ মেট্রিক টন। তবে উপযুক্ত পরিবেশ ও পরিচর্যায় বিঘা প্রতি ৮..০-৯.৫ মেট্রিক টন হতে পারে।

বাজার ও প্রক্রিয়াজাতকরণ

আনারস উৎপাদনের সাথে বাজার ও প্রক্রিয়াজাতকরণে অসামঞ্জস্যতার কারণে বাংলাদেশে ভাল বাজার তৈরি হচ্ছে না।


আনারস বাংলাদেশের অতি জনপ্রিয় ফল। দেশের পার্বত্য অঞ্চলে এবং টাঙ্গািইলের মধুপুরে ব্যাপক আনারস চাষাবাদ হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশের প্রচলিত জাতসমূহ রফতানিমুখী নয়। টেকসই কৃষিকে বেগবান করতে এমডি-২ জাতের চাষ করা গেলে এদেশের আনারস চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।

Avatar

চাষাবাদ ডেস্ক

About Author

You may also like

ফুল ও ফল

আম্রপালি আমের আসল নাম ও বৈশিষ্ট্য জানুন…

এ. কে. আজাদ ফাহিম দেশের আমের জগতে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি জাত বারি আম-৩। এজাতটি আম্রপালি হিসেবে বেশি পরিচিত। স্বাদে, গন্ধে
চলমান কৃষি ফুল ও ফল

অপরিপক্ক বারি মাল্টা-১ কিনে প্রতারিত হবেন না

বারি মাল্টা-১ এর সঠিক হার্ভেস্টিং টাইম সম্পর্কে জানুনঅপরিপক্ক ফল কিনে প্রতারিত হওয়া থেকে বিরত থাকুন। বর্তমানে বাজারে বারি মাল্টা-১ প্রচুর