চলমান কৃষি

কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষি মেলা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন https://www.youtube.com/channel/UCSm1H46YNkBiS0smUHi-u9Q

বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে মেলা। মেলা সাধারণত সামাজিক, ধর্মীয়, বাণিজ্যিক বা অন্যান্য অনেক কারণেই হয়ে থাকে। আজকে কথা বলবো কৃষি মেলা নিয়ে। কৃষি মেলা আমাদের কৃষি প্রধান বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছে। আমাদের দেশে বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও অন্যান্য কৃষি সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থার আয়োজনে বিভিন্ন পর্যায়ে কৃষি মেলা হয়ে থাকে। কৃষি সংশ্লিষ্ট সকলের সর্বোচ্চ ও প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার মাধ্যমে যদি কৃষি মেলাকে জনপ্রিয় করে তোলা যায় তবেই কৃষি মেলার উদ্দেশ্য সঠিকভাবে সফল হবে ।

আসুন শুরুতে কৃষি মেলার গুরুত্ব নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেখে আসি।

কৃষি মেলা কৃষি খাতের প্রচার ও অগ্রগতির জন্য একটি অপরিহার্য প্লাটফর্ম।

১. নলেজ শেয়ারিং ও নেটওয়ার্কিং:

কৃষি মেলা কৃষকদেরকে সকল কৃষি পেশাজীবি বিশেষ করে কৃষি উপকরণ বিক্রেতা, কৃষি বিজ্ঞানী ও গবেষক এবং কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের একটি অনন্য সুযোগ তৈরী করে। এর মাধ্যমে সর্বশেষ উদ্ভাবিত কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান, অনুশীলন এবং তথ্য বিনিময়ের সুবিধা হয়।

২. কৃষি বৈচিত্র্য প্রদর্শন:

কৃষি মেলার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো প্রদর্শনীতে বিস্তৃত পণ্যের সমাহার। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন সেরা কৃষি পণ্যের পরিসর উপস্থাপনের মাধ্যমে একটি অঞ্চলের সমৃদ্ধ কৃষির বৈচিত্র্য প্রদর্শন করে থাকেন। কৃষি মেলা কৃষকদের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিযোগিতা বাড়ায়; ঐতিহ্যবাহী  ও স্থানীয় জাত এবং উচ্চফলনশীল জাত সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণে অবদান রাখে।

3. গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন:

গ্রামীণ অর্থনীতিকে উদ্দীপ্ত করতে কৃষি মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কৃষি মেলা কৃষক ও ভোক্তাদের মধ্যে বাজারের যোগসূত্র স্থাপন করে, কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যসমূহ সরাসরি ভোক্তাদের কাছে প্রদর্শন ও বিক্রি করার সুযোগ পায়। এটি শুধুমাত্র কৃষকদেরকে তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পেতে সাহায্য করে না বরং মধ্যস্বত্ত্বাভোগীদের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে লাভের একটি বড় অংশ নিজেদের কাছে রাখতে পথ দেখায়।

৪. আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ:

কৃষি মেলায় সবসময় অত্যাধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তির প্রদর্শনী হয়ে থাকে। আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি প্রদর্শণের মাধ্যমে কৃষকদের প্রযুক্তি গ্রহণে উৎসাহিত করে। সঠিক পদ্ধতি জানতে সাহায্য করে। এটি কৃষি খাতের সামগ্রিক আধুনিকায়নে অবদান রাখে। 5. সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ:কৃষি মেলাকে কেন্দ্র করে অনেক সময় কৃষকদের কর্মশালা, সেমিনার এবং প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অনেক সময় কৃষির বিভিন্ন দিক যেমন ফসল ব্যবস্থাপনা, বালাই ব্যবস্থাপনা, জৈব কৃষি এবং জলবায়ু-সহনশীল প্রযুক্তির উপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বারা প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য সেশন পরিচালনা করে। এতে কৃষকরা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কৃষি উন্নয়নে অবদান রাখতে মোটিভেশান পেয়ে থাকেন। কৃষি মেলা শুধু অনুষ্ঠান নয়; এটি গ্রামীণ উন্নয়ন, কৃষি অগ্রগতি এবং টেকসই অনুশীলনের অনুঘটক। জ্ঞানের আদান-প্রদান, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং নীতি সমর্থনের মাধ্যমে কৃষি মেলা কৃষিকে একটি প্রাণবন্ত ও স্থিতিস্থাপক খাতে রূপান্তরিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 কৃষি মেলার গুরুত্ব নিয়ে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ কনক চন্দ্র রায় বলেন,  একটি সুষ্ঠুভাবে আয়োজিত কৃষি মেলায় সাম্প্রতিক সময়ে আধুনিক সকল কৃষি প্রযুক্তি উপস্থাপন করা হয়। মেলায় নতুন জাত, মাটির ধরণ, রোগের নমুনা, সারের নমুনাসহ তার কাজ এসব বিষয়ে উপস্থাপন করা হয়। কৃষি মেলায় কৃষক সরাসরি সেবা গ্রহণসহ কৃষি বিভাগের সেবা গ্রহণ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারে। অর্থাৎ কৃষি মেলা নতুন কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণে এবং কৃষি বিভাগের সেবা প্রদান পদ্ধতি অবগত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সর্বোপরি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশবান্ধব স্থায়ীত্বশীল কৃষি উন্নয়নে কৃষি মেলা কৃষিকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ শিল্পে রূপান্তরিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তাই কৃষি মেলা নিয়মিত চালু থাকলে এদেশের কৃষি ও কৃষকের যেমন কল্যাণ সাধিত হবে; তেমনিভাবে আমাদের আগামী প্রজন্মের সাথে আমাদের শেকড় কৃষির সেতুবন্ধন তৈরী হবে।

লেখকঃ এ. কে. আজাদ ফাহিম

Avatar

চাষাবাদ ডেস্ক

About Author

You may also like

চলমান কৃষি

ইরির তত্ত্বাবধানে খাগড়াছড়িতে উচ্চ ফলনশীল ধানের বাম্পার ফলন

খাগড়াছড়ি মহালছড়ি উপজেলার পাকিজাছড়ি গ্রামে এবং সদর উপজেলার ভূয়াছড়ির নতুন বাজার গ্রামে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ইরি) তত্ত্বাবধানে কম সময়ে
চলমান কৃষি

সিলেটের বিশ্বনাথে ৩ দিন ব্যাপী কৃষি মেলার উদ্বোধন

সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলা কৃষি অফিসের আয়োজনে ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ‘কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় ৩ দিনব্যাপী (৮-১০ মে) কৃষি