এ. কে. আজাদ ফাহিম
আজকে আমরা বর্ষার ফল লটকন নিয়ে কথা বলবো। লটকন এক প্রকার দেশীয় ও হলুদ রঙের ছোট্ট গোলাকার ফল। টক-মিষ্টি রসালো এই ফলটি ছোট হলেও এটি পুষ্টি ও ঔষধিগুণে ভরপুর। লটকন স্বল্প সময়ের ফল। বর্ষা মৌসুমে এই ফলটি বাজারে সহজলভ্য হয়। এখন রাস্তাঘাটে সব জায়গায় মিলছে এই ফলটি।
লটকন সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি ফল। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে লটকন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বসতবাড়ির আঙিনায় একটি লটকন গাছ রোপন করে কিভাবে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে বাড়তি আয়ও করা সম্ভব। আজকে তা দেখানোর চেষ্টা করবো।
শুরুতে লটকনের কিছু পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।
লটকনের পুষ্টিগুণ:
১০০ গ্রাম লটকনে ৯২ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়। একই পরিমাণ লটকনে আছে-
১৭৮ মিলিগ্রাম – ভিটামিন সি
১৩৭ মিলিগ্রাম – শর্করা
১৭৭ গ্রাম – পটাসিয়াম
১৬৯ মিলিগ্রাম – ক্যালসিয়াম
১৪.০৪ মিলিগ্রাম – ভিটামিন বি-১
০.২০ মিলিগ্রাম – ভিটামিন বি-২।
লটকনের উপকারিতা:
ভিটামিন-সি এর অন্যতম উৎস লটকন। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।বর্ষাকালে বেশ কিছু রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। এসব ফ্লু বা জ্বর, সর্দি, কাশির মতো সাধারণ রোগ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ লটকন।
লটকনে বিদ্যমান থায়ামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের যত্নে খুবই উপকারী। এটি ত্বককে সতেজ ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। লটকন ত্বকের রুক্ষতা কমায় ও ত্বকের ফেটে যাওয়া প্রতিরোধ করে। নিয়মিত লটকন খেলে চর্মরোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ফাইবারের অন্যতম উৎস হচ্ছে লটকন। এটি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধানে বেশ উপকারী। নিয়মিত লটকন খেলে রুচি বাড়ে এবং বমি বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে।
লটকন হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করতে সহায়ক। যাদের মুখে ঘনঘন ঘা হয়, তারা নিয়মিত লটকন খেলে বেশ উপকার পাবেন। মানসিক অবসাদ দুর করতেও খুব উপকারী লটকন।
আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল লটকন। এটি শুধু পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে না, বরং বিভিন্ন রোগও প্রতিরোধে সহায়ক। তাই মওসুমী ফল লটকন আমাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত রাখা উচিত।
একটি লটকন গাছ নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়। গাছটি বেশ বড় হওয়ার পরও আশানুরূপ ফল দিচ্ছিল না।
ফল না দেওয়ার কারন হিসেবে আমরা দুটো সমস্যাকে চিহ্নিত করি।
একটি হচ্ছে, গাছের পাতায় পোকার আক্রমণ। অন্যটি হচ্ছে, গাছটির উপরে কোন ছায়া না থাকা।
এ গাছটির সমস্যা সমাধানে আমরা- পোকা দমনের জন্য এক সপ্তাহ পর পর দুইবার কীটনাশক স্প্রে করি। পোকা দমন হয়ে গেলে।
লটকন গাছ যেহেতু ছায়া পছন্দকারী গাছ। এগাছটির উপরে কোন বড় গাছ না থাকায় ছায়া সৃষ্টি জন্য গাছের নিচে গাছ আলুর বীজবপন করা হয়। পরবর্তীতে ওই গাছ আলুর লতা গাছটিতে বাড়ার সুযোগ করে দেওয়ার ফলে গাছটিতে প্রচুর পরিমাণে ফুল আসে এবং ফলও ধরে।
লটকনের এত ফল আসে যা আমরা আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশি সবাই মিলে পুরো মওসুম জুড়ে খেতে পারলাম। এর থেকে বুজা গেল যে, একটি লটকন গাছ রোপন করে প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করলে পারিবারিক চাহিদা পূরণ যেমন সম্ভব তেমনি বাজারে বিক্রি করলে অতিরিক্ত উপার্জনও সম্ভব।
এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা নিরন্তর। আল্লাহ হাফেজ।