শাক-সবজি

বেগুন চাষাবাদের সহজ পদ্ধতি

বেগুন অত্যন্ত সুস্বাদু ও জনপ্রিয় একটি সবজি। এর অনেক পুষ্টিগুণাগুণও রয়েছে। এই সবজি প্রায় সারা বছরই চাষ করা যায়। আবাদের পরিমাণ ও উৎপাদনের দিক দিয়ে বেগুন বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান সবজি। আলুর পরই এর অবস্থান। তাহলে আসুন আজ আমরা সংক্ষেপে বেগুনের চাষাবাদ পদ্ধতি জেনে নেই –

মাটি
সব ধরনের মাটিতেই বেগুন চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ, এটেল দো-আঁশ ও পলিমাটি বেশি উপযোগী। এছাড়া শীতকালে চাষাবাদে ফলন বেশি হয়।

রোপণ
প্রথমে বীজতলায় চারা তৈরি করে নিতে হবে। এরপর ৫-৬ সপ্তাহ বয়সের চারা সারি থেকে সারি ৭৫ সেন্টিমিটার (৩০ ইঞ্চি) দূরত্বে ও চারা থেকে চারা ৬০ সেন্টিমিটার (২৪ ইঞ্চি) দূরত্বে লাগাতে হয়। গাছের আকার অনুযায়ী দূরত্ব ১০-১৫ সেন্টিমিটার ( ৫-৭ ইঞ্চি) কম-বেশি করা যায়।

সময়
মাঘ-ফাল্গুন মাসে (মধ্য জানুয়ারী-মধ্য মার্চ) গ্রীষ্মকালীন, বৈশাখ মাসে (মধ্য এপ্রিল-মধ্য মে) বর্ষাকালীন, ভাদ্র-আশ্বিন মাসে (মধ্য আগস্ট – মধ্য অক্টোবর) শীতকালীন ফসলের জন্য চারা রোপণ করতে হয়।

সার
প্রতি বিঘা জমিতে ৫০ কেজি ইউরিয়া, ২০ কেজি টিএসপি, ৩৫ কেজি এমওপি এবং ১.৫ টন পঁচা গোবর বা জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।

প্রয়োগ
অর্ধেক জৈব সার জমি তৈরির পূর্বেই প্রয়োগ করতে হয়। বাকি অর্ধেক জৈব সার, সম্পূর্ণ টিএসপি এবং এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া ও এমপি সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হয়। বাকি ইউরিয়া ও এমপি সার ৩টি সমান কিস্তিতে রোপণের ২১-৩৫ ও ৫০ দিন পর প্রয়োগ করতে হয়।

পরিচর্যা
মাঝে মাঝে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হয়। শীতকালীন ও আগাম লাগানো বর্ষাকালীন বেগুনের জন্য প্রচুর পানি প্রয়োজন হয়। বেলে মাটি হলে ১০-১৫ দিন পর সেচ দিতে হয়। বর্ষাকালীন ও বারোমাসী বেগুনের জন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও করতে হয়।

ঢলে পড়া
ঢলে পড়া বেগুনের অন্যতম প্রধান রোগ। ফিউজেরিয়াম নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়। গাছের গোড়া ও শেকড় বিবর্ণ হয়ে যায়। এ রোগ হলে পাতা নেতিয়ে পড়ে এবং গাছ ঢলে পড়ে। পরবর্তীতে গাছ মারা যায়।

প্রতিকার
এ জন্য রোগ প্রতিরোধক জাত লাগাতে হবে। আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে। আক্রান্ত জমিতে শস্য পর্যায় অনুসরণ করতে হবে।

ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকা
ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা বেগুনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি কম বয়সী ডগাকে আক্রমণ করে। আক্রান্ত ডগা তাজা ভাব হারাতে থাকে। আক্রান্ত ডগার আকার নষ্ট হয়ে যায়। মারাত্মক আক্রমণের ফলে পুরো গাছটিই মরে যেতে পারে।

প্রতিকার
গাছের নিচের দিকের অপেক্ষাকৃত পুরোনো পাতা ও ঝরা পাতাগুলো সরিয়ে পুড়িয়ে ফেলুন। যাতে পোকা কোকুন তৈরি করতে না পারে। ক্ষেতে চারা লাগানোর পর থেকে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করুন। বেগুন গাছের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার নির্দিষ্ট লিউর কিনে ১০-১২ মিটার দূরত্বে স্থাপন করে ব্যবহার করুন।

Avatar

চাষাবাদ ডেস্ক

About Author

You may also like

শাক-সবজি

মিষ্টি কুমড়া চাষাবাদ প্রযুক্তি

উপযুক্ত মাটিঃজৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ মাটি মিষ্টিকুমড়া চাষাবাদের জন্য উত্তম তবে চরাঞ্চলে পলি ও বেলে মাটিতে মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলন
শাক-সবজি

একটি বেগুনের ওজন এক কেজি : বারি বেগুন-১২

|| এ. কে. আজাদ ফাহিম || বারি বেগুন-১২ জাতের বৈশিষ্ট্যঃ জীবনকালঃ বীজ বপনঃ চারা রোপনঃ ফলনঃ বারি বেগুন-১২ জাতের বিশেষ