শাক-সবজি

মিষ্টি কুমড়া চাষাবাদ প্রযুক্তি

উপযুক্ত মাটিঃ
জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ মাটি মিষ্টিকুমড়া চাষাবাদের জন্য উত্তম তবে চরাঞ্চলে পলি ও বেলে মাটিতে মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলন হয় ।

বীজ বপনের উপযুক্ত সময়ঃ

রবি মৌসুমেঃ আশ্বিন-কার্তিক (অক্টোবর-নভেম্বর) এবং খরিফ মৌসুমেঃ ফাল্গুন-চৈত্র (ফেব্রুয়ারী-মার্চ) মাস বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।

বীজ হারঃ
শতক প্রতি ২-৩ গ্রাম বীজহার এবং বিঘা প্রতি (৩৩ শতাংশ) জন্য ৭০-১০০ গ্রাম। প্রতি মাদায় ১-২ টি বীজ বপন করতে হয়।

বীজ ভিজানোঃ
বীজ বপনের পূর্বে ১৫-২০ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে বীজের অংকুরোদগম সহজ এবং দ্রুত হয়।

চারা তৈরি ও রোপণঃ
পলিব্যাগে চারা তৈরি করে রোপণ করা উত্তম। তবে সরাসরি মাদায় বীজ রোপন করা যায়।

চারার বয়সঃ
চারার বয়স ১৬-২০ দিন হলে অথবা ৫-৬ পাতা বিশিষ্ট্য হলে মূল জমিতে রোপন করা যায়।

বীজতলায় চারার পরিচর্যাঃ
নার্সারিতে চারার প্রয়োজনীয় পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে । শীতকালে চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বীজ গজানোর পূর্ব পর্যন্ত প্রতি রাতে প্লাস্টিক দিয়ে পলিব্যাগ ঢেকে রাখতে হবে এবং দিনে খোলা রাখতে হবে । চারার প্রয়োজন অনুসারে পানি দিতে হবে তবে সাবধান থাকতে হবে যাতে চারার গায়ে পানি না পড়ে । পলিব্যাগের মাটি চটা বাঁধলে তা ভেঙ্গে দিতে হবে । চারাগাছে “রেড পাম্পকিন বিটল” পোকার ব্যাপক আক্রমণ হয় । এটি দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে । চারার বয়স ১৬-১৭ দিন হলে তা মাঠে প্রস্তুত মাদায় লাগাতে হবে ।

জমি নির্বাচনঃ
চরের অনাবাদি পতিত জমিতে অথবা উর্বর যে কোন একই জমিতে বারবার একই ফসল চাষ পরিহার করতে পারলে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কমানো যাবে। এদের শিকড়ের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য জমি এবং গর্ত উত্তমরুপে তৈরি করতে হবে।

বেড ও মাদা তৈরিঃ
মাটির প্রকৃতি ও স্থানভেদে ১৫-২০ সেমি উঁচু, ২.৫ সেমি চওড়া এবং লম্বায় সুবিধাজনক এমন বেড তৈরী করতে হবে যাতে পানি সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধা হয়। দু’টি বেডের মাঝে পর্যায়ক্রমে ৬০ সেমি এবং ৩০ সেমি নালা রাখতে হবে।

মাদার সাইজঃ
মাদার আকার দৈর্ঘ্য প্রস্থ ও গভীরতা হবে ৫০ × ৫০× ৫০ সেমি।

মাদার দূরত্বঃ
মাদা হতে মাদার দুরত্ব ৮ ফুট হতে হবে মাদার সারি হতে সারির দুরত্ব ৮ ফুট হবে।

সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
মিষ্টি কুমড়ার অধিক ফলন পেতে হলে বিভিন্ন ধানে সার প্রয়োগ করতে হবে। নিচে শতক প্রতি সারের মাত্রা উল্লেখ করা হলো-

জমি তৈরির সময়ঃ
গোবর ২০ কেজি, ইউরিয়া ৭০০ গ্রাম, টিএসপি ৭০০ গ্রাম, পটাশ ৬১০ গ্রাম, জিপসাম ৩৯০ গ্রাম, দস্তা ৫০ গ্রাম, বোরণ ৪০ গ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ৫০ গ্রাম।

রোপণের ৭-১০ দিন পূর্বেঃ
অবশিষ্ট গোবর মাদা প্রতি ১০ কেজি, টিএসপি মাদা প্রতি ৬০ গ্রাম, পটাশ মাদা প্রতি ৬০ গ্রাম, বোরাণ মাদা প্রতি ৬ গ্রাম, দস্তা মাদা প্রতি ৭ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম মাদা প্রতি ৭ গ্রাম চারা রোপণের ৭-১০ দিন পূর্বে প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোপণের পূর্বে সার দেয়ার পর পানি দিয়ে মাদার মাটি ভালভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। অতঃপর মাটিতে জো এলে ৭-১০ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে।

রোপণের ১০-১৫ দিন পরঃ
চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর ১ম বার
ইউরিয়া মাদা প্রতি ২৫ গ্রাম এবং অবশিষ্ট পটাশ সার মাদা প্রতি ৩০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
রোপণের ৩০-৩৫ দিন পরঃ
চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর ২য় বার ইউরিয়া মাদা প্রতি ২৫ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।

রোপণের ৫০-৫৫ দিন পরঃ
চারা রোপণের ৫০-৫৫ দিন পর ৩য় বার ইউরিয়া (মাদা প্রতি ২৫ গ্রাম) প্রয়োগ করতে হবে।

রোপণের ৭০-৭৫ দিন পরঃ
চারা রোপণের ৭০-৭৫ দিন পর ৪র্থ বার ইউরিয়া (মাদা প্রতি ২৫ গ্রাম) প্রয়োগ করতে হবে।

চারা রোপণ পদ্ধতিঃ
মাঠে প্রস্তুত মাদাগুলোর মাটি ভালোভাবে ওলট-পালট করে, এক কোপ দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জায়গা করে নিতে হবে। অতঃপর পলিব্যাগের ভাঁজ বরাবর ব্লেড দিয়ে কেটে পলিব্যাগ সরিয়ে মাটির দলাসহ চারাটি উক্ত জায়গায় লাগিয়ে চারপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে । চারা লাগানোর পর গর্তে পানি দিতে হবে । পলিব্যাগ সরানোর সময় এবং চারা রোপণের সময় সাবধান থাকতে হবে যাতে চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং মাটির দলা না ভাঙ্গে । নতুবা শিকড়ের ক্ষতস্থান দিয়ে ঢলে পড়া রোগের জীবাণু ঢুকতে পারে এবং শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হলে গাছের বৃদ্ধি দেরিতে শুরু হবে ।

পানি সেচঃ
মিষ্টি কুমড়া পানির প্রতি খুবই সংবেদনশীল। বিশেষ করে ফল ধরার সময় প্রয়োজনীয় পানির অভাব হলে শতকরা ৯০ ভাগ ফল ঝরে যেতে পারে। কাজেই প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। মিষ্টি কুমড়ার জমিতে প্লাবন সেচ না দিয়ে শুধু নালায় পানি দেয়া উত্তম।

শোষক শাখা অপসারণঃ
মিষ্টি কুমড়ার গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট ডালাপালাগুলোকে শোষক শাখা বলা হয়। এগুলোকে গাছের গোড়ার দিক থেকে ৩৫-৪০ সেমি. পর্যন্ত ধারালো ব্লেড দিয়ে কেটে অপসারণ করতে হবে।

মিষ্টি কুমড়ার কৃত্রিম পরাগায়ন পদ্ধতিঃ
মিষ্টি কুমড়ার পরাগায়ন প্রাকৃতিকভাবে প্রধানতঃ মৌমাছি দ্বারা সম্পন্ন হয়। বর্তমানে প্রকৃতিতে মৌমাছির পরিমান পর্যাপ্ত নয়। তাই কৃত্রিম পরাগায়নের মাধ্যমে মিষ্টি কুমড়ার ফলন শতকরা ২৫-৩০ ভাগ বাড়ানো যায়। মিষ্টি কুমড়ার ফুল খুব সকালে ফোটে। ফুল ফোটার পর যত তাড়াতাড়ি পরাগায়ন করা যায় ততই ভাল ফল পাওয়া যাবে। মিষ্টি কুমড়ার কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৯.০০ ঘটিকার মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

নিয়মাবলীঃ
কৃত্রিম পরাগায়নের নিয়ম হল ফুল ফোটার পর পুরুষ ফুল
ছিড়ে নিয়ে ফুলের পাপড়ি অপসারন করা হয় এবং ফুলের পরাগধানী (যার মধ্যে পরাগরেনু থাকে) আস্তে করে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডে (যেটি গর্ভাশয়ের পিছনে পাপড়ির মাঝখানে থাকে) ঘষে দেয়া হয়।

কাঁচা ফলের ভক্ষণযোগ্য পরিপক্বতায় সংগ্রহঃ
কাঁচা ফল পরাগায়ণের ২০-২৫ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করতে হবে। ফলে সবুজ রং থাকবে এবং ফল মসৃণ ও উজ্জ্বল দেখাবে। নখ দিয়ে ফলের গায়ে চাপ দিলে নখ সহজেই ভেতরে ঢুকে যাবে।

পাকা ফল সংগ্রহ ও সংরক্ষণযোগ্য পরিপক্বতাঃ
নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করে মিষ্টিকুমড়ার পূর্ণ পরিপক্বতা নির্ধারণ করা হয়ঃ
১. ফলের বোঁটা খড়ের রং ধারণ করবে;
২. ফলের রং হলুদ অথবা হলুদ কমলা রং ধারণ করবে;
৩. পাকা ফল সংগ্রহকালে বিশেষ সতর্কতাঃ
৪. ফল সংগ্রহের ২/৩ সপ্তাহ পূর্বে সেচ দেয়া বন্ধ রাখতে হবে। এতে ফলের সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি পাবে।

ফলনঃ
উচ্চ ফলনশীল জাত উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে ৩০-৪৫ টন পর্যন্ত ফল পাওয়া যায় ।

Avatar

চাষাবাদ ডেস্ক

About Author

You may also like

শাক-সবজি

একটি বেগুনের ওজন এক কেজি : বারি বেগুন-১২

|| এ. কে. আজাদ ফাহিম || বারি বেগুন-১২ জাতের বৈশিষ্ট্যঃ জীবনকালঃ বীজ বপনঃ চারা রোপনঃ ফলনঃ বারি বেগুন-১২ জাতের বিশেষ
শাক-সবজি

বেগুন চাষাবাদের সহজ পদ্ধতি

বেগুন অত্যন্ত সুস্বাদু ও জনপ্রিয় একটি সবজি। এর অনেক পুষ্টিগুণাগুণও রয়েছে। এই সবজি প্রায় সারা বছরই চাষ করা যায়। আবাদের